আইরিন নাহার/বাসস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন। ৩৮ তম এই বইমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। আজ বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিকেল ৩ টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই বইমেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।’ উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ প্রদান করবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর ও একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
এবারের অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর মূল প্রতিপাদ্য-‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার রীতি থাকলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার কাঙ্খিত অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে মাসের মাঝামাঝিতে। এই বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত ৮ টার পর নতুন করে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে। এছাড়া মহান একুশে ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮ টা থেকে চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় মোট ৩৫ টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬ টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বইমেলায় প্রবেশ ও বাহির পথে নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলার এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকবে। প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশপথ ও ৩টি বাহির পথ জনসাধারণের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বরাবরের মতো বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভেলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার এর জন্য ১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার শিশুচত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশু প্রহর’ থাকছে না।
অন্যদিকে, লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়ে উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোট ১২৭ টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শতকরা ২৫ শতাংশে বই বিক্রি করবে।
বইমেলা আরো প্রাণবন্ত ও জমজমাট করতে এবং লেখকদের উৎসাহ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তরপাশে।
বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এটুআই’ কর্তৃপক্ষ বইমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া থাকছে সার্বক্ষণিক ওয়াই-ফাই সুবিধা।
বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সম্প্রচার করবে। এফ এম রেডিওগুলোতে মেলার নানা তথ্য প্রচার করা হবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।
এবার অমর একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এবার ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর। একইসঙ্গে এবছর বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চাশ বছরও। ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও সংবিধান প্রাপ্তির এই বিশেষ সময়ে বাঙালিত্বের চেতনা জাগানিয়া বইমেলার আয়োজন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মাঝে পৌছে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে স্থাপনাগুলো সৌন্দর্যমন্ডিত হয়েছে। এসব হস্তলিপি পাঠ করে তরুণরা বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত হবে। একই সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও দর্শনের অন্তর্নিহিত অর্থও উদ্ধার করতে পারবে। আবার আমাদের জন্য এবার আনন্দের খবর এই যে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী বাস্তবায়ন কমিটি একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছে। এই প্যাভেলিয়নটি ইতোমধ্যে অনন্যরূপে সাজানো হয়েছে।