ভারতে আকস্মিক বজ্রপাতে হাজারো প্রাণহানি।।প্রতিবছর বজ্রপাতে ভারতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু

প্রেসওয়াচ ডেস্কঃ

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একটি বহুতল বাড়ির বাগানে চার মালী কাজ করছিলেন। ভারী বৃষ্টি নামলে তারা একটি গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ান। কয়েক মিনিটের মধ্যে গুড়ুম গুড়ুম বজ্রের শব্দের পর কমলা রঙের বিদ্যুৎঝলক নেমে আসে গাছের ওপর।

বিজলি চমক সাধারণত কয়েক মুহূর্তের জন্য স্থায়ী থাকে। একটি বজ্রপাতে তিন কোটি ভোল্ট ও ৩০ হাজার অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ থাকে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য যা যথেষ্ট। সূর্যপৃষ্ঠের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি নিজের চারপাশের তাপমাত্রা উত্তপ্ত করতে পারে একটি বজ্রপাত।

বিদ্যুৎ ঝলকের পরেই ওই চার ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যান। তাদের মধ্যে একজন নিহত ও বাকিরা বেঁচে গেলেও মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছেন। বেঁচে যাওয়াদের একজন বলেন, আমার কী হয়েছিল, তা মনে করতে পারছি না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রতিবছর বজ্রপাতে ভারতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারি তথ্যানুসারে, বজ্রপাতে ১৯৬৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এক লাখের বেশি ভারতীয়র মৃত্যু ঘটেছে। এ সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যত প্রাণহানি হয়েছে, তার এক তৃতীয়াংশেরও বেশির জন্য দায়ী বজ্রপাত।

বজ্রের ছোবল থেকে যারা বেঁচে যান, বাকি জীবন তারা শারীরিক দুর্বলতা, মাথাঘোরা ও স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার মুখে পড়েন।

বছরতিনেক আগে থেকে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া শুরু করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। এখন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চমক শনাক্ত করা যায়। রেডিও, টেলিভিশন ও মেগাফোনের মাধ্যমেও লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।

যেসব গ্রামে বেশি বেশি বজ্রপাত ঘটে, সে সব অঞ্চলে মৃত্যু কমিয়ে আনতে সতর্কতামূলক প্রচারে নেমেছে সরকার। কিন্তু দেশটিতে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

ভারতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পরের বছর মার্চের মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ বজ্রপাত ঘটেছে। আগের বছরের একই সময় থেকে পরের বছরে বজ্রপাতের ঘটনা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।

১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা দ্রুতহারে বাড়ছে। ভারতের অর্ধডজন রাজ্যে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। তবে এতে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের ৭০ শতাংশ উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের।

কৃষিখাতে কাজ করা লোকজনই বজ্রপাতের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক সন্ধ্যারানি গিরি বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক বজ্রপাত ঘটে। আমি দেখেছি, ঝড়ের মধ্যে মহিষ আনতে গিয়ে সাত বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

ঘনবসতিপূর্ণ ফরাশগঞ্জে বাস করেন সন্ধ্যারানি। এখানে প্রায়ই বজ্রপাত ঘটে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় প্রতি বছরে ৬০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।

সেখানকার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে কৃষি খামার, পুকুর, টিন ও খড়ের ঘর দেখা যায়। তবে সাগরের কাছে বাস করলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে থাকতে হয়। কিন্তু যারা স্থলের একটি ভেতরে থাকেন, তাদের জন্য বজ্রপাত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

Share: