al

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী দমাতেই পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ‘বিদ্রোহী হলে আর কখনও নৌকা প্রতীক বা দলের পদ-পদবিতে রাখা হবে না’—কেন্দ্র থেকে এমন কঠোর বার্তা দেওয়ার পরও তৃণমূল নেতারা তা আমলে নিচ্ছেন না। নৌকার বিরোধী হিসেবে ভোটযুদ্ধে মাঠে থাকছেন তারা।

এ অবস্থায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তারা চান দল থেকে কেউ বিদ্রোহী না হোক। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মানানো খুব কঠিন কাজ। আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিতদের লাইন দীর্ঘ হোক, সেটাও চায় না তারা।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দেশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে শতাধিক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়েছেন। এর আগে রবিবার আরও কয়েকটি জেলায় ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেছে, বহু ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারাই ভোট করেছেন।

শুধু তা-ই নয়, সোমবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে নিজের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। মহেশখালীর একটি ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী মারা গেছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কয়েকজন।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারটিও ভালোভাবে দেখছে না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ভিন্ন চিন্তা করতে পারে শীর্ষ নেতৃত্ব।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদ্রোহী দমনে আমাদের সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন আসেনি। আবার বিদ্রোহ দমনেও সফল হতে পারছি না- এটা ঠিক। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে ধীরে ধীরে সুফল আসবে। সিস্টেম দাঁড় করাতে সব রাজনৈতিক দলকে কমিটমেন্টে আসতে হবে। আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকুক যেমন চায় না, তেমনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে জিতুক সেটাও চায় না। নির্বাচনে ভোটযুদ্ধ হোক সেটাই চাই।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে কঠোর অবস্থান জানান দিয়েছি। তবু দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে যায়। তবে অনড় অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। আস্তে আস্তে সুফলও আসবে।’

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চায়। অন্য রাজনৈতিক দলের অসহযোগিতায় তা হয়ে ওঠে না। আবার প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন। সেটাও ভালো দেখাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গভীরভাবে চিন্তা করছি এটা কীভাবে ঠেকানো যায়। বিদ্রোহী প্রার্থী দমনের চেয়ে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার ব্যাপারে আমরা ভাবছি। কী কৌশলে তা বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন, ‘বিদ্রোহী দমনের ব্যাপারে নতুন কৌশল আসতেও পারে। আমাদের কঠোর অবস্থানে কোনও নড়চড় হবে না। তবে নিচের দিকের নেতাকর্মীকে মানানো খুব কষ্টের।’