জমে উঠেছে শ্রীপুর পৌর নির্বাচন

জমে উঠেছে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচন। শিল্প অধ্যুষিত প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় মেয়র পদে এবার চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা পৌরসভার উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত এবং পৌরবাসীর দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ভোটগ্রহণ। এখানকার ভোটাররা প্রথমবারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার স্বাদ গ্রহণ করবেন। ভোট নিয়ে সব বয়সের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা গেছে। তবে, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া কতটুকু নিরপেক্ষ হবে, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের মধ্যে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জমে উঠেছে নির্বাচনি মাঠ। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। সব মিলিয়ে সরগরম শ্রীপুরের তৃণমূলের রাজনীতি।

শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এম শামসুজ্জামান জানান, পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে চার জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৯ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার সংখ্যা ৬৭ হাজার ৯৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৩ হাজার ৮৩২ জন এবং মহিলা ভোটার ৩৪ হাজার ১০৩ জন।

সরেজমিনে শ্রীপুর পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকায় এখন নির্বাচনি হওয়া বাইছে। প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটিয়ে, ব্যানার টানিয়ে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচনি মাঠে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার খবর জানাচ্ছেন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চলাচ্ছেন জোর প্রচার-প্রচারণা। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানও জমে উঠেছে নির্বাচনি আলোচনায়।

নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার জন হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র আনিছুর রহমান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী খান (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শামীম আহমেদ মোমতাজী (হাত পাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ আলম (জগ) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ আলমের ছোট ভাই শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ শহীদ দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। পরে তফসিল ঘোষণার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে তার বড় ভাই বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যার্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

শ্রীপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকলেও পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সেই মতবিরোধ এখন আর চোখে পড়ছে না। দলের হাই কমান্ড এবং কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন বলে দাবি নেতাকর্মীদের। ফলে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আনিছুর রহমান ও তার সমর্থকেরা। করছেন সভা সমাবেশ, দিচ্ছেন আধুনিক পৌরসভা গড়ার প্রতিশ্রুতি। দিন রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন সমর্থকরা।

 এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনিছুর রহমান বলেন, টানা তিনবার জনগণের ভালোবাসা ও ভোটে আমি শ্রীপুর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। এই দায়িত্বে থাকাকালে আমি সাধারণ মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। গরীব এবং মেহনতি মানুষের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করেছি। তাই এখানকার ভোটাররা নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

এদিকে, বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকলেও পৌর নির্বাচনে সবাই মতবিরোধ ভুলে দলের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তারা তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পৌরসভার প্রতিটি ঘরে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের সালাম পৌঁছে দিচ্ছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন। তারা দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী খান বলেন, ২০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রথম শ্রেণির পৌরসভা শ্রীপুর। বর্তমান মেয়র তিনবার নির্বাচিত হওয়ার পরও শ্রীপুর পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নয়ন করতে পারেননি। তিনি শুধু সাধারণ মানুষকে আশার কথা শুনিয়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে, শ্রীপুর পৌরসভা হবে দেশের অন্যতম একটি মডেল পৌরসভা। যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত বলে জানান তিনি।

জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী শাহ আলম বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ এখনও ভালো আছে। তবে, শ্রীপুর পৌর শহরে আমার কর্মী-সমর্থকেরা পোস্টার লাগিয়ে আসলে পরদিন সকালে আর দেখা যায় না। কে বা কারা রাতের কোনও এক সময় আমার ‘জগ’ মার্কার পোস্টার ছিড়ে ফেলছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছি। যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয় তবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকতা মোহাম্মদ ইস্তাফিজুল হক আকন্দ বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রভাবমুক্ত করার জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এরই মধ্যে ইভিএম-এ যেন সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেন সেই লক্ষ্যে এলাকায় লিফলেট বিতরণ, গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারী) পৌরসভা এলাকার সব মসজিদে, প্রতিদিন বিকাল থেকে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে ইভিএম প্রদর্শনী হচ্ছে।

আগামী ১৪ জানুয়ারি ২৬টি ভোট কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ওয়ার্ডে ডামি ভোটিংয়ের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ১২ এবং ১৩ জানুয়ারি মাইকিং করে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জেলা নির্বাচন অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র ২৬টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোট কেন্দ্র ১০টি, মহিলা ভোট কেন্দ্র ১০ এবং উভয় ভোট কেন্দ্র ৬টি। ভোট কক্ষ ১৯০টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ২৬টি।

Share: