ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ধান পাওয়া নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও কাজ করছে ফাইজারের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। নতুন এক ল্যাবরেটরি গবেষণার ভিত্তিতে এমন দাবি করেছে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিটি। ফাইজার ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস মেডিক্যাল ব্রাঞ্চের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে গবেষণাটি করেন। ভাইরাসের ১৬টি রূপান্তরের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার ভিত্তিতে আশার আলো দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে একই ধরনের আরও কয়েকটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তারপর তা গোটা যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অক্টোবরে ব্রিটেনে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৫০ শতাংশই এই নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। এরইমধ্যে ইতালি, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায়ও আলাদা বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
সম্প্রতি ফাইজার ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস মেডিক্যাল শাখার গবেষকরা পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন করোনার নতুন স্ট্রেইন ফাইজারের ভ্যাকসিনকে কতটা প্রভাবিত করছে! ফাইজারের ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এমন ২০ জন ব্যক্তির রক্তকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করেন গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের রক্তে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা দিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসকে সফলভাবে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে।
ফাইজারের ভাইরাল ভ্যাকসিন বিষয়ক শীর্ষ বিজ্ঞানী ফিলিপ ডরমিটজার বলেন, করোনার নতুন রূপান্তরটি অনেক বেশি সংক্রামক হওয়ায় তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছিলো, ভ্যাকসিন থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির মধ্যেও টিকে যেতে পারে নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসটি। তবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে চালানো প্রথম পরীক্ষার ফল গবেষকদের মনে আশার সঞ্চার করেছে বলে উল্লেখ করেন ডরমিটজার।
তিনি বলেন, ‘এটা খুব আশাব্যঞ্জক যে নতুন এ রূপান্তর ছাড়াও কোম্পানিটি এর আগের ১৫টি রূপান্তর নিয়েও পরীক্ষা চালিয়েছে। সুতরাং সব মিলে আমরা ১৬টি রূপান্তর নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছি এবং কোনোটিতেই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ব্যত্যয় ঘটেনি। এটা ভালো খবর।’
তবে এ ফলাফল সীমিত বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, যতগুলো নতুন বৈশিষ্ট্য শনাক্ত হয়েছে তার সবক’টি নিয়ে এ পরীক্ষা চালানো হয়নি। ডরমিটজারও মনে করেন, ১৬টি রূপান্তর নিয়ে পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হওয়ার মানে এই নয় যে ১৭তম রূপান্তর নিয়ে পরীক্ষা চালালে একই ফল পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের যে নতুন বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে (ই৪৮৪ কে) সেটা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যাওয়া অন্য রূপান্তরের বিরুদ্ধেও ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে একই ধরনের আরও পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা। আশা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন তারা।