বেরোবি’র শিক্ষক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নামে বে-আইনী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ প্রতারণার অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ  বঙ্গবন্ধুর নামে বে-আইনী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে বেরোবি’র শিক্ষক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে। শুধু তাই নয় বে-আইনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বেরোবির গনিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পায়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধুর নামে অস্তিত্ববিহীন  বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর ট্রাস্টি মশিউর রহমান। বেরোবির পতাকা বিতর্কের আগে গনিত বিভাগে নিজের রুম ভাংচুর করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করেছিলেন মশিউর ।  সিসিফুটেজ পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া যায়।

শিক্ষক মশিউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে রংপুরের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে বেরোবিতে একের পর এক জন্ম দিচ্ছে বিতর্ক। নাম না প্রকাশ করার শর্তে, মশিউরের বিভাগের এক ছাত্র বলেন, “স্যারের একাডেমিক কাজে কোন মনোযোগ নেই, প্রথম থেকেই দেখেছি তিনি দলাদলি আর কোন্দলে ব্যস্ত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলেই দেখা যায় উনি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে প্রশাসনের মুন্ডুপাত করতে ব্যস্ত যা একেবারে ভিত্তিহীন এবং মনগড়া; এই ছাত্র আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের দূর্বলতার জায়গা কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে অস্তিত্ববিহীন সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর ট্রাস্টি হন”।

উল্লেখ্য সম্প্রতি মশিউর রহামানকে অস্তিত্ববিহীন সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করতে দেখা যায়। প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে মশিউরসহ মূলত তারই একান্ত প্ররোচনায় অস্তিত্ববিহীন সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে জনবল নেওয়া হবে উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। মশিউরের এক সহকর্মী জানিয়েছেন, মূলত নিয়োগ বানিজ্য করতেই এই অস্তিত্ববিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় তারা। অন্যদিকে, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের একমাত্র ক্ষমতা রাখেন বাংলাদেশের মহামান্য রাস্ট্রপতি।

রংপুর শহরের এক অভিভাবক বলেন,“রংপুর বাসী এই জঘন্য এবং অসুস্থ মানসিকতার শিক্ষকদের নিয়ে চিন্তিত, তিনি হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যদি এই মশিউরদের কারণে বারবার এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আমরা রংপুর বাসি বরদাস্ত করবনা”।

অন্যদিকে, বেরোবির প্রশাসন থেকে জানা যায় যে, বে-আইনী কাজে লিপ্ত মশিউর অস্তিত্ববিহীন সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর ট্রাস্টি  কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সম্পর্কে অবহিত নন, যা ইউজিসির বিধিবদ্ধ আইন অনুযায়ী অপরাধ। পূর্বে উদাহরণ আছে যে, বাংলাদেশে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে অন্য জায়গায় কাজ করার কারণে চাকরীচ্যুত হয়েছেন। বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ সোহরাব হোসেন বলেন, এইসব বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় কমিটি গঠন করে থাকে এবং প্রমাণ সাপেক্ষ্য চাকরীচ্যুত করার ক্ষমতা রাখে সিন্ডিকেট।

ইউজিসির প্রেস বিজ্ঞপ্তি :

সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্তিত্ববিহীন চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের সর্তক থাকার পরামর্শ ইউজিসি’র সৈয়দপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্তও নয়। ইউজিসি’র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কে কমিশন অবগত নয়।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামক কোন প্রকল্প প্রস্তাবও ইউজিসিতে প্রেরণ করা হয়নি। অস্তিত্ববিহীন এ প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছে ইউজিসি। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) পরিচয়দানকারী অধ্যাপক ড. এ বি এম শরিফুজ্জামান শাহ সম্প্রতি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে জনবল নেওয়া হবে উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে সংসদ সদস্য (৩২৩ মহিলা আসন) জনাব রাবেয়া আলীম-কে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সংবাদ, জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিসহ বিভিন্ন বিষয় ইউজিসি’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ ও চাকরি প্রত্যাশীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে সর্তক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি। আগ্রহীরা প্রয়োজনে ইউজিসি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ও অনুমোদিত প্রোগামের তালিকা অবলোকন করতে পারেন। উল্লেখ্য, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। কাজেই এসব পদে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে নিয়োগ প্রদান করলে তা হবে সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। এছাড়া উপাচার্যবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন  প্রোগ্রামের প্রদত্ত সাটিফিকেটও অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে

Share: