চার মূলনীতির সঙ্গে কোনও আপস নয়: ফজলে হোসেন বাদশা

প্রেসওয়াচ রিপোর্টঃ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘সংবিধানে থাকা চার মূলনীতির ব্যাপারে কোনও ধরনের আপস মেনে নেব না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে যে চার মূলনীতি দিয়ে গেছেন, সেই মোতাবেক দেশ পরিচালনা করতে হবে।’

রবিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকালে রাজশাহীতে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সম্মেলন ও ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে জেলা ও মহানগর ছাত্রমৈত্রী আয়োজিত এই সমাবেশে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের চার মূলনীতি ছিল। এই আদর্শকে ধরেই আমরা অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম। চার মূলনীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু যে ব্যাখা দিয়েছিলেন, সেই ব্যাখাকেও আজ বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার জীবদ্দশায় চার মূলনীতি যদি বাস্তবায়িত না হয়, যদি মৃত্যুর পরও চার মূলনীতি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করছি। কিন্তু তার রাজনৈতিক আদর্শ কী আমরা ধারণ করছি? সেই প্রশ্ন এখন আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়। আমরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন জাতির জনক মনে করি, তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতা মনে করি, তার আদর্শকেই আমাদের আদর্শ মনে করি। বঙ্গবন্ধুর চার মূলনীতি আর সংবিধানের ওপর কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি যে বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে কথা হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সমাজতন্ত্রের ব্যাখা অন্য দেশের মতো নয়। বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রের ব্যাখা বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিজস্ব ব্যাখা রয়েছে। সেই ব্যাখা হচ্ছে- বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। গরিব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাই বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল।’

রাকসুর এই সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, ‘হেফাজতের এক নেতা বলেন, আমাদের কথা শুনে যদি রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাহলে ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। আজব ব্যাপার! তার কথা শুনে ক্ষমতা পরিচালনা করতে হবে! বাবু নগরী কোন নগরের বাবু যে তার কথা শুনে আজকে দেশ পরিচালনা হবে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা হবে নাকি বাবুনগরীর কথায় বাংলাদেশ পরিচালনা হবে আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। সংবিধানের মতে দেশ চলবে নাকি হেফাজতের কথায় দেশ চলবে? যদি সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ চালাতে ব্যর্থ হন, মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ এখনও বেঁচে আছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করবে। আমরা বলেছি, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের কথা। আজকে ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় মূর্তি পূজা করতে পারে। আমাদের সংবিধানে সেই ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি আছে। তাহলে কি আমরা মূর্তি ভেঙে ফেলব? যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর হাতুড়ি মেরেছে, জনগণ তাদের মাথায় হাতুড়ি মারবে। আমাদের লড়াই-সংগ্রাম করেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘৪০ বছর আগে যে আদর্শ নিয়ে ছাত্রমৈত্রী প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সেই আদর্শ বাস্তবায়নে ছাত্রমৈত্রীকে লাল-হলুদের পতাকা উঁচিয়ে ধরতে হবে। সেই পতাকা তুলেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা।

সমাবেশ শেষে ওয়ার্কার্স পার্র্টির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশা নগর ছাত্রমৈত্রীর নবনির্বাচিত সভাপতি ওহিদুর রহমান ওহি, সাধারণ সম্পাদক আরাফাত এইচ মারুফ, জেলার নবনির্বাচিত সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর ছাত্রমৈত্রীর বিদায়ী সভাপতি এএইচএম জুয়েল খান। সমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সম্রাট রায়হান।

Share: