বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী গুরুতর অরাজনৈতিক অপরাধ করেছে: কানাডার কোর্ট

বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীবঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী ১৯৯৬ সালে কানাডায় উদ্বাস্তু হিসাবে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করেছিল। তার সে আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত দেয় ওই দেশের অভিবাসন বোর্ড। এর বিরুদ্ধে নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী মামলা করলে অভিবাসন বোর্ডের পক্ষেই রায় দেয় কোর্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে গুরুতর অরাজনৈতিক অপরাধ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে নূর চৌধুরী এর সঙ্গে জড়িত বলে রায় দেয় কোর্ট। ২০০৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর অন্টারিও এর ফেডারেল কোর্ট এই রায় দিয়েছিল।রায়টি বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোর্ট খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কানাডার ইমিগ্রেশন বোর্ড প্রথমে নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা আবেদন খারিজ করে দেয়। সেটাই কোর্টে যখন চ্যালেঞ্জ করা হয় তখন এই রায় দেওয়া হয়।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোর্ট তার বিশ্লেষণে বলেছে যদি কোনও রাজনৈতিক অপরাধ রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানকে হত্যাকাণ্ডে পর্যবসিত হয় তবে আমাদেরকে অনেক গভীরভাবে বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে সেটি হচ্ছে ওই রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানকে না সরালে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা হবে না। এটি যদি প্রমাণ করা না যায় তবে এটি একটি সাধারণ ফৌজদারি অপরাধ এবং এটি রাজনৈতিক অপরাধ নয়। নূর চৌধুরীরা যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেটি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য করেনি।’

কোর্টের ডকুমেন্টে নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রীকে তাদের নাম ধরে অভিহিত না করে গোপনীয়তার স্বার্থে এসি ও বিডি হিসাবে অভিহিত করা হয়।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোর্ট যে বিষয়গুলি বিবেচনা করেছে সেগুলো হচ্ছে নূর চৌধুরী কোনও ধরনের গুরুতর অরাজনৈতিক অপরাধ করেছে কিনা। রাজনৈতিক আশ্রয় যারা আবেদন করতে পারবে সেই ক্যাটাগরিতে নূর চৌধুরী পড়ছে কিনা। নূর চৌধুরী কোনও নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিনা। যে অপরাধটি হয়েছে সেটি রাজনৈতিক অপরাধ কিনা এবং বাংলাদেশে ফেরত গেলে তার জীবনের ঝুঁকি আছে কিনা অথবা এমন কোনও অপরাধের জন্য দণ্ড দেওয়া হবে কিনা যেটি সে করেনি।’

এর প্রতিটি বিষয়ে অভিবাসন বোর্ডের সঙ্গে একমত পোষণ করে কোর্ট এই রায় দিয়েছে বলে জানান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোর্ট বলছে নূর চৌধুরী যে অপরাধটি করেছে সেটি অত্যন্ত গুরুতর কারণ তিনি রাষ্ট্রপ্রধানসহ আরও ২০ ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে প্রেসিডেন্টের গোটা পরিবার রয়েছে এবং এটি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।’

নূর চৌধুরীদের বক্তব্য ছিল এটি রাজনৈতিক অপরাধ ও তারা যুক্তি দিয়েছিল যে তারা স্বৈরশাসককে ক্ষমতা পাল্টাতে চেয়েছিল কারণ তাদের জন্য জনগণ কষ্ট পাচ্ছিল বলে জানান তিনি। মিজানুর রহমান বলেন, ‘তখন কোর্ট বলছে, তোমরা ক্ষমতা পরিবর্তন করতে চেয়েছে কিন্তু এর মাধ্যমে আরও ২০জন ব্যক্তিকে কেন হত্যা করা হয়েছে? এরাতো রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। নূর চৌধুরীর দেওয়া যুক্তির সঙ্গে বাস্তবতা মিলছে না বলে রায়ে উল্লেখ করেছে কোর্ট।’ তিনি বলেন, ‘নুর চৌধুরীর দাবি ছিল তারা স্বৈরশাসক পরিবর্তন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল কিন্তু কোর্ট তাদের দাবিকে সমর্থন করেনি।’

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নূর চৌধুরী কোথায় ছিল, কী করেছে এই সংক্রান্ত সব দাবি কোর্ট বিশ্বাস না করে ওই হত্যাকাণ্ডে নূর চৌধুরী অংশগ্রহণ করেছিল বলে মতামত দেয় কানাডার কোর্ট।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোর্ট বলছে তুমি রেডিও স্টেশনে গিয়েছ। সেটি যারা ক্যু করেছিল তাদের দখলে ছিল। এর মানে হচ্ছে তুমি এই ক্যু এর সঙ্গে জড়িত ছিলে। তাই তুমি যে দাবিটা পেশ করছো সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। তুমি এই ক্যুতে অংশগ্রহণ করনি বলে যে দাবি করেছ এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় ।’

Share: