রাজধানীর গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

মাহবুব বাশারঃ রাজধানীর গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। চালক হেল্পার থেকে শুরু করে যাত্রীদের মধ্যেও নেই আগের মতো সচেতনতা। অধিকাংশ মানুষের সঙ্গে মাস্ক দেখা গেলেও কেউ কেউ তা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করছেন না। কারও মাস্ক হাতে কিংবা পকেটে। আবার কারও মুখের নিচে। তবে এখনও বাসে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।সকালে নগরীর বাসাবো এলাকায় অফিসগামী যাত্রীদের যথেষ্ট ভিড় দেখা গেছে। বাস আসতে না আসতেই নির্ধারিত ৫০ শতাংশ আসন ভর্তি হয়ে পড়ে। তবে বাসে যাত্রী ওঠানোর সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা শরীরের তাপমাত্রা মাপার কোনও চিত্র চোখে পড়েনি। হেল্পারদের মুখেও ছিলো না মাস্ক। যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।

মিডওয়ে পরিবহনের চালকের সহযোগী রাজিব উদ্দিন বলেন, ‘সকালে অফিস শুরুর আগে এবং বিকালে অফিস শেষ হওয়ার পরে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। তখন মানুষ কোনও নিয়ম মানতে চায় না। জোর করে বাসে উঠে পড়ে। আমরা চেষ্টা করেও তাদের মানাতে পারি না। উল্টো আমাদের বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হয়।’কথা হয় খাজা হোমিও সিণ্ডিকেটের চিকিৎসক ডাঃ ফাহমিদা হসাইন সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল বেলা যাত্রীর তুলনায় যানবাহন কম থাকে। তাই অনেকে হেঁটেই অফিসে চলে যান। মাঝে মাঝে বাসে করে অফিসে যাই। ভাড়া আগের চেয়ে ডাবল নেওয়া হচ্ছে।’ এ সময় মাস্ক মুখে দেখা যায়নি।

কথা হয় আলী আকবর খানের সঙ্গে।মাস্ক মুখ থেকে সরিয়ে দাঁড়ির ওপরে রেখেছেন। সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেকক্ষণ রাখতে রাখতে হাঁপিয়ে ওঠার কারণে কিছু সময় এভাবে রেখেছি।’

একই চিত্র দেখা গেছে রামপুরা ব্রিজ এলাকায়। তবে অফিসগামী যাত্রীদের অধিকাংশের ‍মুখে মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষাসরঞ্জাম দেখা গেলেও শ্রমজীবী মানুষের মাঝে সেই প্রবণতা দেখা যায়নি। তারা বলছেন, ১০ টাকার কমে একটি মাস্ক পাওয়া যায় না। কয়েক ঘণ্টা ব্যবহারের পর তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি করে মাস্ক লাগে। এই পরিমাণ টাকা তাদের জন্য জোগাড় করা কষ্টকর।

রাসেল মিয়া নামে এক রিকশা চালক বলেন, ‘মাস্ক পরে রিকশা চলাতে কষ্ট হয়। শ্বাস নেওয়া যায় না। হাঁপিয়ে উঠি। ঘামে ভিজে যায়। আমাদের প্রতিদিন দুই তিনটা মাস্ক কিনে পরা কঠিন। সরকার চাইলে শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই জিনিসটি ফ্রি দিতে পারে।’

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগ এলাকায় চলাচলরত পরিবহনগুলোতে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রয়েছে। তবে পরিবহনে ওঠানো ও নামানোর সময় স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে দেখা যায়নি। বেশ কয়েকটি পরিবহনের হেল্পারদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। তবে আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অধিকাংশ যাত্রী।

কেশব চন্দ্র হালাদার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আগে ১০ টাকা দিয়ে গুলিস্তান থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আসা যেত। কিন্তু এখন সেটা নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। কিছু বললে উল্টো হেল্পারদের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হয়।’

সকালে খিলগাঁও রেলগেটে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছোট লেগুনা করে যাত্রী পরিবহন চলছে। প্রতিটি লেগুনায় দুই পাশের দুইটি সারিতে চার জন করে আট জন যাত্রী বসানো হচ্ছে। সামনে চালকের পাশের একটি সিটে বসছে দুই জন যাত্রী। এছাড়া পেছনে হেল্পারের দাঁড়ানোর জায়গায় আরও একজন যাত্রী ঝুঁলিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কারও কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

মজিবর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আগে ১০ টাকা দিয়ে গুলিস্তান থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আসা যেত। কিন্তু এখন সেটা নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। কিছু বললে উল্টো হেল্পারদের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হয়।’

সকালে খিলগাঁও রেলগেটে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছোট লেগুনা করে যাত্রী পরিবহন চলছে। প্রতিটি লেগুনায় দুই পাশের দুইটি সারিতে চার জন করে আট জন যাত্রী বসানো হচ্ছে। সামনে চালকের পাশের একটি সিটে বসছে দুই জন যাত্রী। এছাড়া পেছনে হেল্পারের দাঁড়ানোর জায়গায় আরও একজন যাত্রী ঝুঁলিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কারও কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

কথা হয় ডাক্তার মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানুষ সচেতন না হলে আমরা কী করবো? প্রতিদিন রোগীদের বলি আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। কিন্তু কেউ মেনে চলে না। মানুষ মনে করে করোনা নেই। চলে গেছে। মানুষের দিকে তাকলে করোনা আছে বলে মনে হয়?’

 

Share: