বেরোবি’র প্রধান ফটক:একজন গণতান্ত্রিক ভিসি’র হস্তক্ষেপে পূরণ হল শিক্ষার্থীদের একযুগের দাবি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর এর শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি প্রধান ফটক। বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ফটক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট অ্যাসোসিয়েশন (ব্রুডা) বিতর্কের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধার বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। ব্রুডা পরিবারও এই দাবির প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করে সেটিকে যৌক্তিক ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ই জুলাই,২০২০ মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ স্যারের নিকট ব্রুডা কর্তৃক আয়োজিত “বিতর্ক নিয়ে ভাবনা” শীর্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে প্রধান ফটক নির্মাণের দাবিটি উপস্থাপন করা হয়।
বেরোবি’রপ্রধান ফটক:একজন গণতান্ত্রিক উপাচার্য প্রফেসর ড.  নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র হস্তক্ষেপে পূরণ হল শিক্ষার্থীদের একযুগের দাবি।
মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ও এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে মাননীয় উপাচার্য মহোদয় এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একটি নমুনা নকশার মাধ্যমে ফটক নির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু সেই নকশা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার জায়গা পূরণ না করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক মাধ্যমে নকশা পরিবর্তনের দাবি জানায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির জায়গা থেকে ব্রুডা গত ২৭ জুলাই,২০২০ পুনরায় মাননীয় উপাচার্য স্যারের সাথে ” বিতর্ক নিয়ে ভাবনা – গঠনমূলক চিন্তা, সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং অামাদের ভাবনা” শীর্ষক লাইভ সেশনের অায়োজন করে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং উপাচার্য স্যারের মাঝে লাইভে গঠনমূলক অালোচনা হয়। ব্রুডার তরফ থেকে সাধারণ সম্পাদক মোঃ অাসাদুজ্জামান অাবীর স্যারের কাছে প্রশ্ন উত্তর পর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নকশার নমুনা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। ব্রুডার এই অায়োজনের মাধ্যমে লাইভ চলাকালীন সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো কমেন্টের মাধ্যমে প্রকাশ করে। এরপর গত ২৯ জুলাই,২০২০ উপাচার্য স্যার শিক্ষার্থীদের কাছে নকশা চেয়ে নোটিশ প্রদান করেন। অামরা অাশা রাখি এর মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার জায়গা পূরণ হবে। ব্রুডা সবসময়ই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গঠনমূলক ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করার কাজ করে যাবে।
ব্রুডার পক্ষ থেকে উপাচার্য স্যার ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ ।
উল্লেখ্য,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্খিত প্রধান ফটক এর নকশা উদ্বোধন করে ফেসবুকে পোস্ট এবং প্রেস রিলিজ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার (২৬ জুলাই, ২০২০) বিকেল ৫টায় মূল প্রবেশদ্বারের নকশা আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। উদ্বোধনের নকশা প্রকাশের পরপরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে সমালোচনা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য দাবী জানিয়ে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও রংপুরের স্থানীয়রা। মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হবে অত্যাধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন এমনটিই চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লীষ্ট সকলেই। প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই চাওয়া পূরণে আশ্বাস দিতে দিতে কেটে গেছে এক যুগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নকশা উদ্বোধন করার সময় বেরোবি উপাচার্য বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বার নির্মাণ করা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। নকশা উন্মোচনের আজকের দিনটি বেরোবি’র সকল শিক্ষার্থীর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভের ১ যুগ পর এই প্রথম তাদের দাবি পূরণ হতে চলেছে।

এদিকে উদ্বোধন করা নকশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বেমানান এবং শিক্ষার্থীদের আই ওয়াশ বলে দাবী শিক্ষার্থী এবং সংশ্লীষ্ট অনেকের। এনিয়ে ফেসবুকে তাদের নিজস্ব টাইমলাইন এবং বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট ও কমেন্টসে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহজাহান তনয় ফেসবুক পোস্টে বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গেটের নকশা উদ্বোধন হয়েছে। জানিনা কোন ইঞ্জিনিয়ার এই কাজ করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের পাশের কলিজিয়েট স্কুলের গেট থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে এই নকশা করেছেন। যদিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এলামনাই নেই, তবুও আমি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজেদের অর্থায়নে এই নকশার চেয়ে ভালো গেট উপহার দিব। ইনশাল্লাহ।

প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, গেটের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লক্ষ টাকা। এই গেট বানাতে কি ৫ লক্ষ টাকার বেশি লাগবে? আর যদি খোরশেদ আলম বাঁচাতে এমন করা হলে কি করা উচিত?

আবিদ হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী তার পোস্টে লেখেন, সম্প্রতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের নিয়ে অনৈতিক বিবৃতি দিয়েছে উপাচার্যের পক্ষের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী। সে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তারা অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিচার দাবি করছে। আর এই মুহুর্তে কথিত নকশা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি ঘোরানার চেষ্টা করেছে প্রশাসন। মূলত এটা কোনো গেটই না। এটা প্রহসন মাত্র।

হাসান মাহমুদ বিপুল ফটক নিয়ে দেওয়া এক স্ট্যাটাসের কমেন্টসে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি একটি দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক নির্মাণ করা। কিন্তু এটা কি সত্যি দৃষ্টিনন্দন?অন্যান্য ভার্সিটির গেট দেখলেই ভালোলাগা কাজ করে!এরকম গেট স্কুল- কলেজ লেভেলের জন্য মানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য না!

আসমাউল হাসান আশা বলেন, এই গেইট বানালে আমি আর এ ভার্সিটি যামু না!

নাহিদ হাসান জিহাদ বলেন, এর চেয়ে স্কুল কলেজের গেইটই ভালো,২টাকার নকশা চাই না।

একরামুল হক রতন তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, যেহুতু বেরোবির প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি ছিল আধুনিক ডিজাইন সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটকের; সেহুতু, আপনাদের সিলেক্টকৃত বেরোবির প্রধান ফটকের ডিজাইনটি আরো আধুনিকায়ন এবং দৃষ্টিনন্দন করার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানাচ্ছি। আশা করছি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সজিব হোসেন উপাচার্যকে মেনশন করে লিখেছেন, Kalimullah Nazmul Sir, এটি অত্যন্ত নিম্নমানের স্থাপত্যশৈলীর কাজ। এ ফালতু টাইপের ফটক, আপনার কুরুচির বহিঃপ্রকাশ হবে। দয়া করে ভালো স্থাপত্যবিদ দিয়ে ফটকের ডিজাইন করুন। আমরা চাই, এই ফটক অন্যন্য মর্যাদা পাক সারা পৃথিবীতে। ধন্যবাদ।

সোহানা সেঁজুতি বলেন, থাক সবাই চুপ কর প্লিজ, আমাদের প্রধান ফটক দরকার নেই, এই ফটকের চেয়ে ফটকবিহীন হয়ে থাকা বেশি ভালো।
মোস্তফা রিয়াদ বলেন,আমারে নকশার দ্বায়িত্ব দেন আমি চোখ ধাঁধানো একটা নকশা উপস্থাপন করবো,কিন্ত আপনাদের আরোপিত নকশায় যদি ভার্সিটি গেইট হয় তাহলে সেটা ভেঙে ফেলবো, ভিসি সাহেব বিশ্বাস করেন সত্যিই ভেঙে ফেলবো। ফাইজলামি করেন নাকি!

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া নকশা মতে, ৩২ ফিট উঁচু ও ৫১ ফিট প্রশস্থ প্রধান ফটকটি দুই ভাগে বিভক্ত, মূল ফটক ও পকেট গেট। ফটকের মাঝের ৩ ফিট প্রশস্ত বড় পিলারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবনের লাল ইটের ডিজাইন সিগনেচার থাকবে। প্রধান এই ফটক নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে নব্বই লাখ টাকা।

Share: