মো: শাখাওয়াত হোসেন মুকুল:
রোজা প্রায় শেষের দিকে। দিন যাচ্ছে আর ঘনিয়ে আসছে ঈদ। আর ঈদকে সামনে রেখেই নগরবাসীর চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মতে রোজার শেষ দশ দিনে চলে ঈদের কেনাকাটা। এদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভীড়। রাজধানীর শপিংমলগুলোতে দিনের বেলায় ক্রেতাদের ভীড় কম হলেও ইফতারের পরপরই ভীড় বাড়ছে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অভিজাত সব শপিংমলগুলোতে চলছে কেনাকাটা। দোকানীরা বলছেন, এ বছর বিক্রি তুলনামুলক ভালো।
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে দোকানগুলো সাজানো হয়েছে বিভিন্ন বাহারি সাজে ঈদের পোশাক। আর তাতে ক্রেতারা ভিড় করছেন পছন্দের পোশাক খুঁজতে। এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, রাপা প¬াজা, আড়ং ও বসুন্ধারা শপিংমল, মৌচাক ফরচুন শপিং মল, মৌচাক সেন্টার পয়েন্ট, বেইলি রোড, শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস ও বায়তুল মোকাররম মার্কেট সহ ফুটপাত ঘিরে জমে ওঠেছে ঈদের কেনাকাটা।
তবে, নিউ মার্কেটে স্বল্প দামে পোশাক কেনার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা ভিড় করতে শুরু করেছেন। বিক্রেতারা বলেছেন ঈদের কেনাকাটা বেশ ভালোই জমে ওঠেছে।
রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে বি-টু-উইন এর ব্যবস্থাপনা পার্টনার রাজিব হোসাইন বিডিসংবাদ মেলাকে বলেন, রাজধানীতে বসুন্ধরা সিটিসহ আমাদের ছয়টা শো রুম আছে। প্রতিটা শো রুমে আগের বছরের থেকে এ বছর বিক্রি অনেক ভাল। তবে এলিফ্যান্ট রোডের অবস্থিত জেন্টস পোশাক বিক্রি প্রতিষ্ঠান ব্যঙ এর বিক্রয় কর্মকর্মর্তা মো: তুহিন বিডিসংবাদ মেলাকে জানান, দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরমের কারনে ক্রেতারা একটু কম আসলেও ইফতারের পরে বিক্রি অনেক ভালো হয়। গতবছরের চেয়ে এবছর রমজানের মাঝামাঝি সময়ে বিকিকিন জমে উঠেছে। ঈদ পর্যন্ত টার্গেটের তুলনায় বেশি বিক্রিা হবে বলেও জানান তিনি।
শাহজাহানপুরের বাসিন্দা মৌসুমি হোসাইন দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মৌচাক ফরচুন শপিং মলে গতকাল এসেছেন ঈদের কেনাকাটার জন্য। বেবি আইটেম দেখেছিলেন। তিনি বলেন, আজ(গতকাল) সময় পেয়েছি বলে তাই ছুটে এসেছি। এছাড়াও মৌসুমি হোসাইন বলেন, যে কয়টা দোকানে গিয়েছি তার প্রত্যেকটি দোকানেই ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। বিক্রেতারাও সেবা দিতে প্রস্তুত।
বসুন্ধারা শপিং মল পরিদর্শনকালে কথা হয় রাজধানীর ইসলামবাগ থেকে আসা জয়নাল আবেদীনের সাথে। তিনি বলেন, আর কয়দিন পরেই ঈদ। তাই কয়েকদিন আগে থেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে শপিংমলে আসা। তাছাড়া বসুন্ধরা সিটিতে পোশাক-আশাক, বিদেশি কাপড়, রেডিমেড অলঙ্কার, থান কাপড়, বিভিন্ন রকমের বুটিকস বা হাতে কাজ করা কাপড়, চামড়ার ব্যাগ, থেকে শুরু করে গহনা এমনকি মেয়েদের সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে। কেবলমাত্র শপিংমলেই সিমাবদ্ধ নয়। এখন থেকেই ঈদের কেনাকাটা করার জন্য জামা কাপড় পছন্দ করি। এছাড়া প্রতি বছর তিনি বসুন্ধরা সিটি থেকে কেনাকাটা করেন বলেও জানান। বসুন্ধরা শপিংমলের প্রতিটি লেভেলের প্রতিটি দোকানেই কেনাকাটার ব্যস্ততা দেখা গেছে।
যমুনা ফিউচার পার্কেও এখন ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত। ক্রেতা আকর্ষণে চোখ ধাঁধানো পণ্য, আলোক সজ্জা এবং মার্কেটের বাইরেও সাজানো হয়েছে। পণ্য কিনলে লটারির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। বাড়ছে বিক্রি। উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের ভিড় বাড়ছে এখানে। সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব ধরনের কেনাকাটার সঙ্গে ও বিনোদন সুবিধা থাকায় ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ এ মার্কেট। তাই সারা বছর তো বটেই, রমজানের শুরু থেকেই এই মার্কেটে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত কিংবা ফ্যাশন সচেতন সব শ্রেণির ক্রেতার সকাল থেকে মার্কেট বন্ধ পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকছে। এই মার্কেটে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডই সব এক ছাদের নিচে এক সঙ্গে হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে। এখানে ক্রেতা আকর্ষণের আরেকটি উৎকৃষ্ট গুণ হচ্ছে সর্বোচ্চ ভালোমানের পণ্যটিও যে কোনো অভিজাত শপিংমলের পণ্যমূল্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম।
নিউমার্কেটের শাড়ির দোকানিরা বিডিসংবাদ মেলাকে জানায়, তাদের দোকানে হিন্দি সিরিয়ালের জনপ্রিয় নায়িকাদের পরিহিত শাড়ি রয়েছে। এখানে যারা কেনাকাটায় আসছেন, বিশেষত তরুণীরা এ শাড়িগুলো বেশি নিচ্ছেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাবরের মতো ভারতীয় এবং পাকিস্তানি কাপড় বিক্রির শীর্ষে রয়েছে।
থ্রি-পিস ও শাড়ির জন্য বিখ্যাত রাজধানীর বেইলি রোড। অসহনীয় যানজটের মধ্যেও রোববার নারী ও তরুণীদের ভিড় জমেছিল এখানে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত। ইফতারির পর ভিড় বেশি থাকে।
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর বেচাকেনা ভালো। এর কারণ হল এ বছর রাজনৈতিক অবস্থা এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো।
ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি মৌচাক-মালিবাগ-মগবাজার জোনের সহ সভাপতি ও ফরচুন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: মোতাহার হোসেন দেওয়ান বিডিসংবাদ মেলাকে জানান, দিন যত যাচ্ছে, কেনাকাটার চাপও বাড়ছে। কেনাকাটা ক্রমশ মধ্যরাত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শেষ সময়ে মার্কেট এলাকায় প্রচন্ড যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।