বার্সেলোনাকে হতাশ করে কোপা ডেল রে’ শিরোপা জিতলো ভ্যালেন্সিয়া

সেভিয়া, (বাসস) : মৌসুমের শেষ শিরোপাটা জয় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হতাশা ভুলতে চেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ভ্যালেন্সিয়া তা হতে দেয়নি। উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে কাতালান জায়ান্টদের হতাশায় ডুবিয়ে ২-১ গোলের জয় নিয়ে কোপা ডেল রে’ শিরোপা নিশ্চিত করেছে ভ্যালেন্সিয়া।
নিরপেক্ষ ভেন্যু সেভিয়ার মাঠে প্রথম থেকেই ভ্যালেন্সিয়া ছিল অপ্রতিরোধ্য। রেকর্ড টানা পঞ্চমবারের মত বার্সেলোনা শিরোপা স্বপ্নে বিভোর থাকলেও প্রথমার্ধেই কেভিন গামেইরো ও রডরিগোর গোলে এগিয়ে যায় ভ্যালেন্সিয়া। লিওনেল মেসির ৭৩ মিনিটের গোলে বার্সেলোনা ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি। শেষ ১৭ মিনিট ভ্যালেন্সিয়াকে অবশ্য সবদিক থেকে চেপে ধরেছিল লা লিগার চ্যাম্পিয়নরা। মেসি কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেন। অন্যদিকে ভ্যালেন্সিয়ার পর্তুগীজ মিডফিল্ডার গনসালো গুয়েডেস দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন।
জানুয়ারিতে লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়া যখন রেলিগেশন জোন থেকে মাত্র চার পয়েন্ট দুরে ছিল তখনই কোচ মার্সেলিনোর বরখাস্তের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছিল। তবে সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলে শেষ পর্যন্ত ৬১ পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের পরে চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে ভ্যালেন্সিয়া।
ফাইনাল শেষে উচ্ছসিত মার্সেলিনো বলেছেন, ‘আমাদের নিজেদের ওপর সবসময়ই আস্থা ছিল। বার্সেলোনাকে পরাজিত করে কাপ শিরোপা জয় সত্যিই অসাধালন। এই জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’
এর আগে শুক্রবার মেসি স্বীকার করেছিলেন তার দল এখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে লিভারপুলের বিপক্ষে হতাশাজনক পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যে কারনে মানসিক ভাবেও দলকে চাঙ্গা রাখাটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। বার্সা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দেকেও এই পরিস্থিতিতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন মেসি। তবে পরপর দুটি দু:খজনক পরাজয়ের পর লিগ শিরোপা ঘরে আসলেও ভালভার্দের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। ভালভার্দে বলেন, ‘আমি ভাল আছি। একজন কোচ যখন পরাজিত হয় তখন দ্রুতই তা থেকে সড়ে এসে পরবর্তী চ্যালেঞ্জের চিন্তা করে। আমি জানি এই ক্লাবটির জন্য পরাজয় বিষয়টা বেশ হতাশার।’
ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তামেউ বলেছেন, ‘আমি মনে করিনা এটা কোচের ভুল।’
জেরার্ড পিকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ঠ করেছে। সবকিছু সবসময় তার উপর নির্ভর করেনা।’
ফেবারিট হিসেবেই কোপা ডেল রে’র ফাইনালে খেলতে এসেছিল বার্সেলোনা। তবে প্রথমবারের মত লিগে শীর্ষ চারের মধ্যে থাকার কারনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট নিশ্চিত করা ভ্যালেন্সিয়াও নিজেদের সেরাটা দেবার জন্যই মুখিয়ে ছিল। ২০০৮ সালের পর এটাই তাদের প্রথম শিরোপা। ক্লাব প্রতিষ্ঠার এটা শতবর্ষী বছর, আর এ বছরই ক্লাবকে সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিল খেলোয়াড়রা। ১৫ ম্যাচ পরে যেখানে লিগ টেবিলে অবস্থান ছিল ১৫তম সেখানে মৌসুম শেষে শীর্ষ চারে থাকা, সাথে বোনাস হিসেবে বার্সেলোনাকে হারিয়ে কাপ শিরোপা জয়। একটি ক্লাবের জন্য এর থেকে বেশী প্রাপ্য আর কি হতে পারে।
অধিনায়ক ডানি পারেজো বলেছেন, ‘আমরা ইতিহাস রচনা করেছি।’
গামেইরো বলেছেন, ‘কঠিন মুহূর্তে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।’
ইনজুরির কারনে মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগান, লুইস সুয়ারেজ ও ওসমানে ডেম্বেলেকে ছাড়াই মূল একাদশ সাজাতে বাধ্য হয়েছিলেন ভালভার্দে। ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভ্যালেন্সিয়া এগিয়ে যেতে পারতো। ক্লেমেন্ট লেঙ্গেল্টের ভুলে রডরিগো দারুন সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি। বার্সেলোনার রক্ষনভাগের মূলে থাকা সার্জিও বাসকোয়েটের নেতৃত্বে বাকি দুজন নিজেদের সামলে নিলেও ২১ মিনিটে শেষ রক্ষা হয়নি। হোসে গায়ার সহযোগিতা গামেইরো গোল করে ভ্যালেন্সিয়াকে এগিয়ে দেন। ৩৩ মিনিটে ডানদিক থেকে কার্লোস সোলারের ক্রসে রডরিগো ব্যবধান দ্বিগুন করেন। বিরতির আগে ইভান রাকিটিচের ভলি অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৪৩ মিনিটে মেসির প্রথম শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
বিরতির পর সেমেডো ও আর্থারের স্থলাভিষিক্ত হন ম্যালকম ও আরটুরো ভিডাল। মেসি ও পিকে এ সময় যেন ব্যর্থতার লড়াইয়ে মেতে উঠেছিলেন। ম্যাচ শেষের ১৭ মিনিট আগে শেষ পর্যন্ত মেসির সান্তনাসূচক গোলে বার্সেলোনা ব্যবধান কমাতে সক্ষম হয়।

Share: