শেয়ার বাজার নিয়ে কারসাজী করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

(বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেয়ার বাজার নিয়ে কারসাজীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, শেয়ার বাজার নিয়ে কেউ কোন রকমের কারসাজী করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত হবে।
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি কোন রকম গেইম খেলতে চায় তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শেয়ার বাজারের রিস্ক ফ্যাক্টরটা বিনিয়োগের সময়ই মাথায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ আমি বলবো এটা অনেকটা জুয়া খেলার মত। কাজেই যারা যাবে (বিনিয়োগ করবে) তাদেরকে সেটা বিবেচনা করে যেতে হবে। তার দায়িত্ব অন্য কেউ নেবে না।’
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপণী ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা শেয়ার বাজার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই শেয়ার বাজার নিয়ে অতীতে অনেক ঘটনা ঘটেছে। এটা যেন স্থিতিশীল থাকে সেজন্য যা করণীয় তা আমরা করবো।’
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারিদের সচেতনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা শেয়ার বাজারে যাচ্ছে তাদেরতো জানাই উচিত যে, এখানে গেলে লাভও যেমন হবে লোকসানও তেমন হবে। যেকোন সময় তারা লাভ করতে পারে এবং যে কোন সময় লোকসান হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘লাভ করলে খুশি আর লোকসান হলেই সরকারের দোষ এটাতো ঠিক নয়।’
সরকারের পক্ষ থেকে শেয়ার বাজার ব্যবস্থাপনায় যা যা করণীয় তাঁর সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ করে বাজার উঠে যাওয়া বা পড়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো যতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাঁর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
‘তবে, কোন কোম্পানীর শেয়ার কিনছে, তার প্রকৃত অবস্থাটা কি, এখানকার শেয়ার কিনলে লাভ হবে কি না, এটা যিনি কিনবেন তার বিবেচনার বিষয়। এটা আমি আপনি কেউ করে দিতে পারবোনা। এটা তাকেই করতে হবে’।
প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারিদের আশ্বস্থ করে বলেন, ‘আমি বলবো খুব বেশি শংকিত হওয়ার কিছু নেই। এটা কিভাবে ঠিক করা যায় সেটা আমরা দেখবো।’
এজন্য কয়েকদিন আগে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি এই সংসদ ভবনে অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, ব্যাংকিং সেক্টরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলাপ করেছেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে বিভিন্ন সংসদ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রেক্ষিতে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার কোন ক্রটি থাকলে সরকার এটি গভীরভাবে ক্ষতিয়ে দেখবে বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধ পাটকলগুলো চালুর সময়ই তাঁর একটা শর্ত ছিল এগুলোকে লাভজনক করতে হবে এবং এজন্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে না।
তিনি মিল মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা মিল চালাবেন আর প্রতিবার সরকারের কাছ থেকে টাকা এনে শ্রমিকদের বেতন দেবেন সেটা কেমন কথা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিলে লাভ না হোক অন্তত শ্রমিকের বেতনটাতো দিতে পারতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিলগুলোকে লাভজনক কিভাবে করা যায়। আর ব্যবস্থাপনায় কোন ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।’
এক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ বিমানের যে সমস্যা ছিল সেটা কিন্তু আমরা কাটিয়ে উঠেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেখা যায় যারা কর্মরত তারাই আত্মঘাতী কাজ করে। সমস্যাটার সৃষ্টি করে নিজেদের সম্পদ বা দেশের সম্পদ রক্ষা না করে সেখান থেকে লুটপাটের একটা জায়গা করে নেয়। কাজেই সেই লুটপাটটাকেই আগে আমাদের বন্ধ করতে হবে। সেটাকেই এখন আমাদের ধরতে হবে এবং আমরা ধরবো। যেমন বিমানে করেছি এখানেও করবো।’
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেবাসীকে পুণরায় ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নিজ নিজ এলাকায় অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর স্মরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধি চাই। আমার দুঃখ হচ্ছ ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে কিছু মানুষকে ধর্মান্ধ করে ব্যবহার করা হয়। তাদের ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন জাগে যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে বেহেশতে যাওয়ার কথা কীভাবে তারা চিন্তা করে? মানুষ হত্যা মহাপাপ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবাক লাগে কিছু সম্পদশালী ধনী ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবার ব্যবহার হচ্ছে। আমি জানি না যারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তারা কীভাবে এভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যায়।’তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই ধর্মান্ধতা থেকে মানুষ মুক্তি পাক।’ ধর্মান্ধতার শিক্ষা প্রদানকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কিন্তু আত্মঘাতী হয় না, অন্যকে উপদেশ দেয়।
তিনি বলেন, এভাবে মানুষ হত্যা করলে কেউ যদি বেহেশতে যেতে পারতো তাহলে যারা এই পরামর্শ দিচ্ছে তারা আগে কেন যাচ্ছে না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ আমাদের সর্তক থাকতে হবে। দেশবাসীকে সর্তক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি করা হচ্ছে। ৩৫ বছরে যদি কেউ পিএসসিতে পরীক্ষা দেয়, ওই পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট হয়ে চাকরিতে ঢুকতে ঢুকতে ৩৮ বছর হবে। ৩৮ বছর বয়সে একজন চাকরিতে ঢুকবে আবার কেউ কেউ ২২ বছর বয়সে একই চাকরিতে ঢুকবে। কত বছর ডিফারেন্সে দুইজন একসঙ্গে চাকরিতে ঢুকবে? এটা কি তারা চিন্তা করেছে?’
বিরোধীদলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত ৩২ করার সুপারিশ করার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেখা যায় কেউ হয়তো ২৪-২৫ বছরেই চাকরিতে ঢুকছে। তারা অবসরে চলে যাচ্ছে। আমরাতো ইতোমধ্যে অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করেছি। যে ৩৮ বছরে চাকরিতে ঢুকবে সে ২২ অথবা ২৩ বছর চাকরি করতে পারবে। সে কিন্তু পূর্ণ পেনশন পাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জন্ম থেকে মেধা বা উদ্যম বা তারুণ্য বা সৃজনশীলতাটা সবচেয়ে বেশি থাকে ২৪ কিংবা ২৫ বছর বয়সে। ২১ বছরেই একজন মানুষ পূর্ণতা পায়। ২১ থেকে ২৫ বছরই সবচেয়ে বেশি কর্মদক্ষতা থাকে। এই সময়টা কোথায় যাবে। একটা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টায় ওরা কী করবে?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তো ৩০ বছর পর্যন্ত চাকরির বয়স। ৩৮ বছর হলে আরও ৮ বছর চলে যাবে। এ সময় চাকরিতে ঢুকে তারা কী কাজ করতে পারবে? তারপর আবার বলা হবে অবসরের বয়স বাড়ানো হোক। অবসরের বয়সসীমা বড়ানো হলে নতুন চাকরি দেয়া যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন কেউ আর অবসরে যাবে না, পদখালি হবে না, আর চাকরিও দেয়া যাবে না। তাহলে আমরা যাব কোনদিকে? চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করলে অবসরের বয়স ৬২ বা ৬৫ করতে হবে। তখন নতুন চাকরিই দেয়া যাবে না। শুধু একটা দাবি তুললেই হবেনা, সবকিছু বিবেচনা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরির বয়স বাড়ানো নিয়ে যারা আন্দোলন করে তাদেরকে এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুব কম খরচে পড়ানো হয়। সুতরাং ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যায় সেটাই ভালো। সেটার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমরা সরকার গঠন করার পর কোনোবারই পিএসসির পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়নি। নিয়মিত পরীক্ষা হচ্ছে এবং সবাই চাকরিতে ঢুকতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সেশনজট অনেকটাই কমিয়ে এনেছি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সেশনজট রয়েছে; সেটাও যাতে না হয় সে ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।’
নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে সংসদে যোগ দেয়া বিএনপির সংসদ সদস্যদের স্বাগত জানান সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি তাদের কাছে গঠনমূলক সমালোচনাও প্রত্যাশা করেন। সংসদের প্রতি মানুষের আস্থা যেন আরও বাড়ে সে ব্যাপারে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ টুর্মামেন্টে মঙ্গোলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলকে অভিনন্দনও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলটির ফাইনালের জন্য শুভকামনাও করেন।

Share: