(বাসস) : আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, এমপি বলেছেন, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপির দরকষাকষি দেশের রাজনীতির জন্য বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে যাওয়া না যাওয়ার সঙ্গে কারো (বেগম জিয়া) মুক্তির সম্পর্ক নেই। কারণ, যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ। কোন দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তির জন্য ভোটাররা তাদের ভোট দেয় নি।’
আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ আজ দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের জবাবে একথা বলেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ শুক্রবার এক আলোচনা সভায় বেগম জিয়া মুক্তি পেলেই বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে যাবেন বলে মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমনি, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক কোন মামলায় সাজা ভোগ করছেন না।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ীই বেগম জিয়াকে মুক্তি পেতে হবে। এর বাইরে মুক্তি পেয়ে বিদেশে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি সাজা মাফ করে দিতে পারেন।
এ বিষয়ে হানিফ বলেন, কারাগারে থাকা কারো নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য যিনি প্যারোলে মুক্তি নিতে চান তাকে, অথবা তার পরিবারের কোন সদস্যকে আবেদন করতে হবে।
বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য বা প্যারোলের জন্য কেউ আবেদন করেছে বলে তার জানা নেই উল্লেখ করে হানিফ আরো বলেন, কারাগারে থাকা কোন ব্যক্তি যদি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ নিয়েও চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে যেতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চেয়ে বিএনপির নেতারা বা তার পরিবারের কোন সদস্য আবেদন করেন নি। তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডও বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোন পরামর্শ দেয় নি। এ ধরনের কোন পরিস্থিতি হলে আদালত বিবেচনা করবেন।
দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভার বিষয়ে হানিফ বলেন, শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের যৌথসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতির পিতার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে নানা ধরনের স্মৃতি জড়িত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারো কোন স্মৃতি থাকলে, সে সকল স্মৃতির সঙ্গে জড়িত কেউ বেঁচে থাকলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেসকল স্মৃতি সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে কারো কাছে কোন ছবি থাকলে সেগুলো সংগ্রহ করা এবং বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা চিঠি কারো কাছে থাকলে তা সংগ্রহ করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জোরদার করতে গঠিত আটটি টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ কার্যক্রম দেখভাল করবেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপ-কমিটি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করে জমা দেবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ তা অনুমোদন দেয়ার পর তা বাস্তবায়িত হবে।
হানিফ এ বিষয়ে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে দলীয় কর্মসূচি প্রণয়নও বাস্তবায়ন করা হবে।
সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা কর্মপদ্ধতি ঠিক করবেন।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, দলের ডাটাবেজ তৈরি করতে সকল পর্যায়ের নেতাদের যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে মাহবুব-উল আলম হানিফের সভাপতিত্বে দলের সম্পাদক মন্ডলীর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।