“জরুরি বিভাগে ডিউটি করছে কুকুর…” – জাঁ-নেসার ওসমান

ঘটনাটা কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
অসুস্থ্য রোগী নিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের. জরুরি বিভাগে গেলে দেখা যায় যে, জরুরি বিভাগের ডিউটি ডাক্তারের টেবিলের. উপর ক্লান্ত হয়ে এক সারমেয় বা কুকুর ঘুমাচ্ছেন।
প্রতিবেদক তাচ্ছিলভরে. লিখেছেন, “চিকিৎসকের টেবিলের উপর ঘুমিয়ে আছে এক নেড়িকুকুর”।
সব ঠিকআছে, কর্তব্যরত ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে তার টেবিলে যে শুয়ে আছেন সেই সারমেয়কে নেড়ি কুকুর বলাতেই আমার আপত্তি।
প্রতিবেদক কি জানেন বিশ্ব চিকিৎসাবিজ্ঞানে, রকেট সায়েন্সে ও সাহিত্যে কুকুরের অবদান??
তাযদি জানতেন তাহলে এই শ্রদ্ধেয় সারমেয়কে আপনি নেড়ি কুকুর বলতে পারতেন না। পাঠক মনে রাখবেন চিকিৎসাশাস্ত্রের. পিতা বলতে বিশ্বে যার নাম সবাই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি হচ্ছেন খৃষ্টপূর্ব ৪৬০ সালের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মি: হিপোক্রিট।
আজ প্রতিটি চিকিৎসক চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্বে হিপোক্রিট ওথ্বা শপথ বাক্য পাঠকরে, তারপর চিকিৎসক হন। আর আপনার এই মি: হিপোক্রিটআজ থেকে প্রায়আড়াই হাজার বছর পূর্বে সারমেয় বা কুকুরের উপর ব্যবচ্ছেদ করে চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শীহন। সেই মানব দরদী সারমেয় যাঁরা মানবচিকিৎসার জন্য জাঁ-নিসার মানে জীবনউৎসর্গ করলো আজ আপনি তাঁকে নেড়ি কুত্তা বলে হেয় করছেন!! এই সাহস বা ঔধত্য আপনাকে কে দেয়??
আপনি কি জানেন রাশিয়ার মনোবিজ্ঞাণী ড. আইভান পাবলোভকে কন্ডিশনালরিফ্লেক্স কারা শিখিয়েছিলেন??
আপনারভাষায় নেড়িকুকুর, আরআমারভাষায়শ্রদ্ধেয় বামপন্থীসারমেয়। যিনি বৈজ্ঞানিক ড. আইভান পাবলোভকে কন্ডিশনালরিফ্লেক্স এর তথ্য শিখিয়েছিলেন। এই নেড়িকুকুর যদি ড.পাবলোভকে সাহায্য না করতো তাহলে আজও আপনারা মনোবিজ্ঞানের একটি বিশেষ বিষয় থেকে বঞ্চিত থাকতেন! ড.পাবলোভ ঐ সারমেয় স্যারের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে, আমরা সবাই কুকুরের মতো আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার মাঝে আবদ্ধ। আমরা ঘুম থেকে উঠেই পাবলোভ্স ডগের মতো ঘন্টা শুনলেই দৌড়মারি। কোনোপ্রকার চিন্তাছাড়া বাছবিচার ছাড়া ইমার দৌড় ভোঁ-দৌড়। আর কালক্রমে এই কন্ডিশনালরিফ্লেক্স এমনই তীব্র আকার ধারণ করে যে, কেউ যদি বলে ভাই, তুমি পাবলোর ডগের মতোঘন্টা শুনলেইকন্ডিশনালরিফ্লেক্সের. তাড়নায়না দৌড়ে, একটু ভেবেধীরে. ধীরে. যাও দৌড়ালেতোপড়েও যেতেপারো, ব্যাথাও পেতেপারো?? ব্যাস যেইব্যাটা এই কথাবলল, আমনি তুমি তোমার কন্ডিশনালরিফ্লেক্সের. তাড়নায় হালারে. ধইরা দিলা মাইর। এটা কি মানুষের কাজ হলো??
তারপর তুমি দেখো আমেরিকার সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া লেখক জ্যাকলন্ডন, তাকে লেখক বানিয়েছে কে? ওই তোমার ভাষায় নেড়িকুকুর“ হোয়াইটফ্যাং”। এই “হোয়াইটফ্যাং”উপন্যাস লিখেতি নিজ্যা কলন্ডন, বিশ্বসেরা লেখক হলেন।
বুঝলেন আপনি অযথা সারমেয়দের ছোট করবেন না নেড়িকুকুর বলবেন না। এদিকে “রবিনসন ক্রুশো”র, কুকুরটি জাহজডুবির পর রবিনসনকে বাঁচিয়েছিলো। ফলে জন্ম নিলো বিশ্ব সাহিত্যেও অমর সৃষ্টি “রবিনসন ক্রুশো”র। আর আপনি বাংলার এক সাংবাদিক সারমেয় কে, সৃষ্টির সেরা জীব যাঁর জন্ম আদমের মাটি ও ফেরেস্তার থুথু দিয়ে, তাকে আপনি নেড়িকুকুর বলেন!!
রকেটসায়েন্স বোঝেন? এহাশূন্যে রকেট প্রেরণ। বর্তমানেভারতের এ পি জে আবুলকালামতাঁর“উইংস অব ফায়ার”বইটিতেরকেটসায়েন্সনিয়েবহুকথাবলেছেন। কিন্তু উনিকিজানেন ১৯৫৭ সালের ৩রা, নভেম্বর, বিশ্বে প্রথম যে মহাশূন্যযান স্পুটনিকপাঠানোহয়েছিলো সেটাপরিচালনাকরেছিলো কে? “লাইকা”নামেরবিশ্বের. প্রথমমহিয়সীনারীসারমেয়। বুঝলেন বিশ্বের রকেট সায়েন্সে প্রথম অবদান আপনার ভাষায় নেড়িকুকুর,“লাইকা”। কিন্তু আমাদের. কাছেতিনিবিশ্বের. প্রথম এক মহান উৎসর্গী তপ্রাণ সারমেয় এম এস লাইকা। যাকেআপনারাপুড়িয়েমারলেন। কারণউৎকোচগ্রহণকারীপ্রকৌশলীরা সঠিক রুপে কুলিং চেম্বার তৈরীকরেনি, ফলে আমাদের শ্রদ্ধেয়া সারমেয় এম এস লাইকাপুড়েমারাযান। তাইকুকুরকে নেড়ি কুকুর বলবেননা, শ্রদ্ধা করতে শিখুন। জানেন তো“জীবে দয়া করে. যেই জন সেই জন সেবিছেঈশ্বর”।
বুঝলেন মহাভারতে, একলব্য দ্রোণচার্য্যর. নিদ্রার যাতেডির্ষ্টাবনা হয় তাইসারমেয়রমুখবন্ধকরার জন্য বান মেরেছিলো।
সেইপাপেঅর্জুন ও দ্রোনার্চায্য একলব্যের. বুইড়া আঙুল কাইট্টা তার জীবন ধ্বংসকরল।
আর মহাপ্রস্থানের পথে, ধর্মপূত্র যুধিষ্ঠির যখন স্বর্গের. পথে রওয়ানাহলো। তখন একে একেপথি মধ্যে দ্রৌপদী, নকুল-সহদেব, অর্জুন, ভীম সব মারা গেলো। তখন যুধিষ্ঠিরের একমাত্র সাথীছিলো একজন সারমেয়, আপনারভাষায়কুকুর। সবাইমারা গেলেওএই সারমেয় যুধিষ্ঠিরকে ত্যাগ করেননি। বরংউনিনিজে কোলেকরে. জুজুকেমানেযুধিষ্ঠিরকে স্বর্গে নিয়েযান। মনে রাখবেন মহাভারতে একমাত্র যুধিষ্ঠির ও সারমেয় মানে কুকুরজীবন্ত অবস্থায় স্বর্গে প্রবেশকরেন।
আর আপনি সেই মহান কুকুরকে-সারমেয়কে নেড়িকুকুর বলেন??
চিন্তা করেন যেখানে কোটালীপাড়াউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের. জরুরি বিভাগে বেতন দিয়েও লোক পাওয়া যাচ্ছে না- সেখানে এক মহান সারমেয় জরুরিবিভাগে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালনকরছেন!! তাকে আপনি হেয় করলেন!!
বাঙালরি চৌদ্দগুষ্টির ভাগ্য যে,স্বয়ংধর্মরুপী সারমেয় আপনাদের. জরুরি বিভাগে ডিউটি করছে।
আশা করি আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন।
নেড়ি কুকুর বলার জন্য পুরো সারমেয় জাতির কাছে আপনি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন।
জয় বাংলা।

জাঁ-নেসারওসমান।চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমাজ চিন্তাবিদ।