বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি মেনে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রর্বতিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, এই মূলমন্ত্র দ্বারা আমাদের বৈদেশিক নীতিমালা পরিচালিত। প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আমরা বিশ্বাসী। তবে, যে কোনও আগ্রাসী আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা সদা-প্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষানীতি ১৯৭৪-এর আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিশেষায়িত সামরিক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে।
শনিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০ উপলক্ষে তিন বাহিনীর সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম হয়েছিল, তা আজ মহীরুহ হয়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা এক উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেছিলেন প্রতিরক্ষা নীতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে জাতির পিতা প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যে কোনও ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ‘‘লক-ডাউন কার্যক্রম’’ বাস্তবায়ন করেছেন। সাধারণ জনগণের মধ্যে মহামারি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিদেশ থেকে আগতদের জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এছাড়াও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকার সমন্বিত করোনাভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। বিগত এক দশকে আমরা সশ্রস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখাকে আধুনিক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ দ্বারা সমৃদ্ধ করেছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই আমাদের সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী যে পরিমাণ আধুনিকায়ন হয়েছে অতীতে কোনও সময়েই তা হয়নি।
তিনি বলেন, আর্থ-সামজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সুপরিচিত নাম। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে, তখনও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে দেশের প্রতিরক্ষা এবং দেশ গড়ার কাজে আরও বেশি অবদান রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।