
মানুষের জীবনে কিছু মানুষ আসেন ঠিক নদের মতো—নিঃশব্দে, ধীর গতিতে, কিন্তু একান্তভাবে জীবনকে সিঞ্চিত করে যান।আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফিক ভাই ছিলেন তেমনই এক মানব-নদী—যিনি নিঃশব্দে জনমানুষের হৃদয়ে প্রবাহিত হতেন ভালোবাসা, সহানুভূতি আর কর্মবীরত্বের ধারা হয়ে।
মানুষের জীবন পরিক্রমায় কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা কেবল নামেই বড় হন না—তাঁরা হৃদয়ের আকাশজুড়ে জ্বলজ্বল করেন চিরকাল। আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফিক ভাই ছিলেন তেমন একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ, যিনি দলীয় পরিচয়ের সীমা ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনে হয়ে উঠেছিলেন একজন আশ্রয়দাতা, শুভানুধ্যায়ী এবং প্রকৃত অর্থে সমাজের প্রতিনিধি।
গণমানুষের নেতা হিসেবে দক্ষিণগাও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে শুরু করে ৭৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে পালন করেছেন। কিন্তু তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয় ছিল—তিনি ছিলেন ‘সাধারণের মধ্যে অসাধারণ’। কখনো কাউকে শত্রু ভাবেননি, বরং পরমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন। তাঁর আচরণে ছিল কোমলতা, নেতৃত্বে ছিল দৃঢ়তা, এবং হৃদয়ে ছিল অশেষ ভালোবাসা।
একজন সাংবাদিক কিংবা একজন শিক্ষকের দৃষ্টিতেই নয়, বরং একজন ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু হিসেবে আমি তাঁকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছি। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি ছিলেন মানবিক, সৎ, এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। মানুষের দুঃখ-কষ্টে তাঁর হৃদয় কেঁপে উঠত। তিনি শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, শিক্ষা, নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে রেখেছেন অনন্য অবদান। তাঁর হাত ধরে অনেকেই সাহস পেয়েছে, এগিয়ে গেছে, আলোর পথ খুঁজে পেয়েছে।
তাঁর রাজনীতি ছিল গণমানুষের ঘামে ভেজা মাটি স্পর্শ করে গড়ে ওঠা এক আস্থা-দৃঢ় বৃক্ষ। তিনি ছিলেন সেই বটবৃক্ষ, যার ছায়ায় ক্লান্ত মানুষ আশ্রয় পেত, আর হতাশ মানুষ খুঁজে পেত সাহস। তিনি রাজনীতিকে বেছে নিয়েছিলেন সেবার হাতিয়ার হিসেবে, যেখানে ‘পদ’ নয়—‘পরার্থ’ ছিল মুখ্য।
৭৩ নং ওয়ার্ডের প্রতিটি অলিতে-গলিতে তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস—একটি অসুস্থ শিশুর পাশে রাত কাটানো, একটি বিধবার ঔষধের ব্যবস্থা করে দেওয়া, কিংবা একজন শিক্ষার্থীর বই কেনার জন্য নিজ পকেটের টাকা বের করে দেওয়া—এসব ছিল তাঁর নিত্যদিনের রুটিন। মানুষের চোখের জল মুছে দেওয়াই ছিল তাঁর আসল রাজনীতি।
তিনি ছিলেন একজন আলোকবর্তিকা, যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন শুধু বক্তৃতায় নয়—চুপচাপ হাতে তুলে নিয়েছেন মানুষের দুঃখ, নিজের কাঁধে। তিনি ছিলেন একজন আত্মার চিকিৎসক, যিনি রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রতিটি হৃদয়ে ঢুকে পড়েছিলেন আপনজন হয়ে।
তাঁর মৃত্যু কেবল একটি প্রিয় মুখের প্রস্থান নয়—এ যেন এক সত্যভ্রষ্ট সময়ের চিহ্ন, যখন নীরবতা বলে দেয়, “এমন মানুষ আর জন্মায় না বারবার।” আজ, তাঁর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তাঁকে হারাই আবার ফিরে পাই—প্রতিটি মসজিদের মিনারে, প্রতিটি বিদ্যালয়ের বারান্দায়, প্রতিটি অসহায় মানুষের চোখে।
আমরা তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি—জান্নাতের জানালাগুলো যেন তাঁর জন্য সবসময় খোলা থাকে, আর ফেরদৌসের সুবাসে ভরে থাকে তাঁর আত্মা।
শফিক ভাই, আপনি ছিলেন হৃদয়ের রাজপথে এক সহানুভূতির মিছিল, যে মিছিল কখনো থামে না—চিরকাল বয়ে চলে মানুষের মুখে মুখে, স্মৃতিতে ও ভালোবাসায়।
আজ তাঁর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে, তাঁর শূন্যতা কেবল একটি চেয়ার নয়, একটি দিকনির্দেশনার অভাব—একজন আলোকবর্তিকার অনুপস্থিতি। আমরা সকলে তাঁর জন্য পরম করুণাময়ের দরবারে প্রার্থনা করছি—আল্লাহ্ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মর্যাদা দান করেন।
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় শফিক ভাই, আপনি চিরকাল অমর থাকবেন আমাদের অন্তরে।
আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফিক এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে হৃদয়ভরা শ্রদ্ধাঞ্জলি (সাবেক কাউন্সিলর, ৭৩ নং ওয়ার্ড, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন)
ছবি কৃতজ্ঞতা: কবি নজরুল ইসলাম প্রয়াত ্আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম এর সহদেব অনুজ এবং সুযোগ্য প্রতিনিধি।
লেখক: প্রফেসর ডক্টর দিপু সিদ্দিকী, ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সিটিজেন টাইমস এবং এমটিভি ইউএসএ কান্ট্রি ডিরেক্টর।