শহীদ মহিবুল্লাহ বীর বিক্রম এর পরিবারকে উচ্ছেদ। আশ্রয়হীন পরিবারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

প্রেস ওয়াচ রিপোর্ট:মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ মহিবুল্লাহ (বীর বিক্রম) এর দুই সন্তানকে ১ নাম্বার নর্থ ব্রুক হল রোড,ঢাকার বাড়ি থেকে বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫ জুন সোমবার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল আকস্মিক এক ঘণ্টার মধ্যে বাইটি খালি করার নির্দেশ দেন। উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের মাথায় যেন তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে উচ্ছেদ অভিযানের নোটিশ দেখে তারা হতবিরাম্বল হয়ে পড়েন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা শহীদ পরিবারের সদস্য হিসাবে সময় প্রার্থনা করেন এবং তাদের সঙ্গে থাকা কাগজপত্র যাচাই করার অনুরোধ করেন। কিন্তু উচ্ছেদ দল কোন কথা না শুনে তাদেরকে জোর প্রয়োগ করে ঘর থেকে বের করে দেয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কনিষ্ঠ পুত্র পুলিশ সদস্য সালাউদ্দিন তার পরিবারের কান্না শুনতে পেলে উপস্থিত হন এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করার অনুরোধ জানান। এক পর্যায়ে বাঘ-বিতণ্ডা তৈরি হলে বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মহিবুল্লাহ কনিষ্ঠ পুত্র সালাউদ্দিনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় ।তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করার অভিযোগ এনে থানায় সোপর্দ করা হয়। সালাউদ্দিন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ।তার শরীরে এবং আঙ্গুলে একাধিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যায়। গতকাল মঙ্গলবার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের কে নির্যাতনের ছবি এবং শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি এবং তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে উপস্থিত সাংবাদিক দের মধ্যে একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এসময় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিক নেতা মোতাহার হোসেন, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট জার্নালিজম এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (পিবজা) ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক ডক্টর দিপু সিদ্দিকী, চলচ্চিত্র পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা জা-নেসার ওসমান, দৈনিক দেশ বাংলা পত্রিকার সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মুসলমানদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহার মাত্র ৩-৪ দিন আগে অমানবিক আচরণ ও নির্যাতন করে শিশু সন্তান সহ খোলা আকাশের বের করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

উল্লেখ্য,১৯৭১ সাল এর ১০ ই ডিসেম্বর রূপসা নদীর উপর বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘পলাশ ‘এর উপর শত্রুর বোমা বর্ষণে শাহাদাত বরণ করেন সালাউদ্দিন এর পিতা মহিবুল্লাহ।বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন এবং সালাউদ্দিন এর পিতা একসাথে শহীদ হন । জাতির এই দুই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে একসাথে সমাধিস্হ করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিবুল্লার দুই সন্তান। শাহাদাত বরণ কালে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মহিবুল্লার বড় ছেলের বয়স ছিল তিন এবং কনিষ্ঠপুত্র সালাউদ্দিনের বয়স ছিল ৬ মাস। অসহায় মাতা এই দুই শিশুকে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়লে ১ নং নর্থব্রুক হল রোডের বাড়িতে সরকারের সহায়তায় আশ্রয় নেন। ৫০ এর বেশি সময় ধরে বসবাসরত এই বাড়ি থেকে বিনা নোটিশে জোরপূর্বক তুলে দেওয়ায় তারা এক কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। তারা বলেন, পরিত্যক্ত এই বাড়িটিতে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় সুবিধাবাদীচক্র সরকারের এই সম্পত্তি কুক্ষিগত করার জন্যই গোপনে জাল কাগজপত্র সৃজন করে এবং কোর্টকে ভুল বুঝিয়ে ও ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাদেরকে কোনকালেও কোন প্রকার নোটিশ প্রদান করা হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা এখন নিরুপায় ও আশ্রয়হীন । এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন , তাদের বাবা একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ পরিবারের সদস্যদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার থাকা অবস্থায় এমন ভাবে মানসিক নির্যাতন এবং উচ্ছেদ করার ঘটনা মেনে নিতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একমাত্র শেষ আশ্রয়স্থল উল্লেখ করে ভুক্তভোগী শহীদ পরিবার ঈদের আগেই ৫০ বছরের অধিকার ধরে থাকা এই বাড়িটিতে তাদের নিরাপত্তাসহ পুনর্বাসন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। উল্লেখ্য তাদের মালামাল এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তছনছ করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

Share: