ক্ষোভ থেকে দেশে দেশে বর্তমান বা সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার ঘটনা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। আধুনিক কালে তাদের রক্ষা করতে রাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করলেও ঠেকানো যায়নি হামলাকারীদের।
সবশেষ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আধুনিক জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নেতা, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে। বন্দুক যেখানে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, যেখানে রাজনৈতিক সহিংসতা প্রায় অচিন্তনীয়, সেই জাপানে এমন হত্যাকাণ্ডে হতবাক পুরো বিশ্ব।

আবেকে হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে বন্দুকধারী তাতসুইয়া ইয়ামাগামিকে (৪১) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাৎসুইয়া সাবেক নৌসেনা বলে জানা গেছে। হত্যাকারী জানিয়েছে, অ্যাবের ওপর সে অসন্তুষ্ট ছিল। তার ডাবলড-ব্যারেলের বন্দুকটি ছিল হাতে বানানো।
আব্রাহাম লিংকন
আব্রাহাম লিংকন ছিলেন আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট। তাকে ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, একটি থিয়েটারে মাথার পিছনে গুলি করে খুন করেন জন ওয়াইকস বুথ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে লিংকনের ওপর হামলা হয়। পরদিন সকাল ৭টায় মৃত্যু হয় তার।

মারো ফ্রাসোঁয়া
১৮৯৪ সালে ২৪ জুন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মারি ফ্রাসোঁয়া সাদি কার্নটকে ছুরি মেরে খুন করা হয়। ওই ঘটনার পরদিনই মারা যান কার্নট। তদন্তকারীরা জানান, এক ফরাসি নৈরাজ্যবাদীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিশোধ নিতেই ওই হামলা করা হয় কার্নটের ওপর। খুনি সিজেরিও নিজেও ছিলেন সেই নৈরাজ্যবাদীদেরই একজন।

মার্টিন লুথার কিং
মার্টিন লুথার কিং ছিলেন আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রী ও আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার গণআন্দোলনের নেতা ছিলেন মার্টিন। ভারতের মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে মার্টিনকে সামনে থেকে গুলি করে খুন করে জেমস আর্ল রে নামে এক শ্বেতাঙ্গ যুবক।

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
নাথুরাম গডসের হাতে খুন হন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। রাষ্ট্রনেতা না হলেও গান্ধী দেশনেতা। জাতির জনক। তাকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা মনে করেন দেশের একটি বড় অংশ। গান্ধী দিল্লিতে তার সান্ধ্যকালীন প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি। তাকে সামনে থেকে বুকে পর পর তিনটি গুলি করেন হিন্দুত্ববাদী নাথুরাম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বেনজির ভুট্টো
পাকিস্তানের প্রথম ও একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। মাঝে প্রায় ৯ বছর আড়ালে থেকে আবার ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন ভুট্টো। ঠিক করেন নির্বাচনে লড়বেন। প্রচারও শুরু করে দেন। কিন্তু ভোটের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে একটি জনসভায় হত্যা করা হয় ভুট্টোকে।

ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করেন তারই দুই দেহরক্ষী সতবন্ত সিংহ এবং বিয়ন্ত সিংহ। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তার সফদরজং রোডের বাসভবনের বাগানে হাঁটছিলেন ইন্দিরা। বাড়ি থেকে এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে তার আকবর রোডের অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক সেই সময়েই তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান তার রক্ষীরা।
