mktyddhdr_psh_srkr

প্রেসওয়াচঃ বাংলাদেশে এক নাগাড়ে একটি বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র ১৪ (চৌদ্দ) বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিলো,
সে বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রের কথা বলতে গেলে বলতে হবে একটি ছড়া, সেটি হলো,
“মাছের রাজা ইলিশ /বাতির রাজা ফিলিপস”।এই বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটির অন্তমিল দর্শকের খুব ভালো লাগলো।
আজ আমি আপনাদের. সেই বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রের আদ্যোপান্ত জানাতে স্বচেষ্ট হয়েছি। জানিনা কতটা সফল হবো।
[ বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটি রনির্মাণ সময়: ২০.১০.১৯৮৭ – ১১.১১.১৯৮৭ ]
ফিলিপস বাল্বের এই বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটি হংকংএ, সিনেফেক্স ওয়ার্কশপ কোম্পানী লিমিটেড এর অপটিক্যাল ডিপার্টমেন্টের, সুপারভাইজার ও প্রোডিউসার, মিষ্টার, এ্যান্ডিমা, তাদের ন্যাথান রোডের পাইওনিয়ার বিল্ডিং এর ১১ (এগারো) তলায় বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটির নির্মাণ হয়। চলচ্চিত্রের শেষে,সুপার ইম্পোজের রং নিয়ে আমার অনুমোদন গ্রহণ করেন।
ক্যামেরা,লাটিং ও পরিচালনায় ছিলাম আমি জাঁ-নেসার ওসমান স্বয়ং আর এডিটিং এ ছিলেন জনাব আবদুর রহিম ওরফে আদর ভাই।
বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটি গ্রাম-বাংলার পটভূমিতে নির্মিত।
শহর থেকে জামাই শ্বশুর বাড়ী এসেছেন রাতে খাবার সময় সাধারণ বাল্বের ঝাপসা আলোয় ইলিশ মাছের কাঁটা বাছতে অসুবিধা হচ্ছিল। তখন, ১৯৬০ সালের প্রচন্ডজনপ্রিয় রেডিওর কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানের “মজিদের মা”খ্যাত মিসেস আয়েশা আক্তার, শাশুড়ীর অভিনয় করছিলেন, তিনি বললেন, “মানিক বৈঠক খানার বাত্তিটা আইন্না এ হানে লাগাতো।”
তখন জনাব আফজাল হোসেন যিনি, মানিকের অভিনয় করছিলেন, তিনি বাল্বটা পাল্টে দেন।
আর পুরো ঘর ফকফকে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।
তখন খুশীতে বাংলা চলচ্চিত্রের কৌতুক অভিনেতা “ববী” বলে উঠলেন,
“ও মানিক কি বাত্তি লাগাইলি, সব ফকফকা।”
“ক্যা, ফিলিপস, আলোও যেমন, টেকেও তেমন।”
“আসলে ইমাছের রাজা ইলিশ আর বাত্তির রাজা ফিলিপস” এই বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটিও ৩৫ মি: মি: সেলুলয়েডে নির্মিত। কেবল এই বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রটির পর এটা এতই সফল হলো যে,এর পর প্রায় সব বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রের নির্মাণ অন্তমিল দিয়ে শুরুহলো।
যেমন, “বাটারফ্লাই টেলিভিশন”কিস্তিতে বিক্রয় শুরু করলেন।
আর বিজ্ঞাপন ছিল এরকম যে এক বাচ্চা পাশের বাসায় টেলিভিশন দেখতে গেছে- তো ওই বাড়ীর ছোট্ট ছেলেটি ওকে টিভি দেখতে দেয়নি। তখন ওই বাচ্চা বাসায় এসে কাঁদছে।
ওর বাবা তখন তার বন্ধুর সাথে দাবা খেলছিলেন। বাবা বললেন, অন্তু কাঁদছে কেন?
মা জানালেন যে, পাশের বাড়ীর আলিফ ওকে টিভি দেখতে দেয় নি।
এই সময় বাবার বন্ধু চালদিয়ে বললেন,
“কিস্তি”!
“কিস্তি”!
তখন বাবা বললেন, চল তাহলে কিস্তিতে টেলিভিশন কিনি।তার পর যার কাছে যা টাকা আছে সব যোগাড় করলো।
মাটির ব্যাংক ভেঙে টাকা বের করা হল আর ওরা কিস্তিতে টেলিভিশন ক্রয় করলেন।
শ্লোগানটা হলো-
“সবাই এবার মেলাও হাত
তিনশ টাকায় কিস্তিমাৎ”
মজার ব্যাপার হলো- বাটারফ্লাই টেলিভিশনের কর্ণধার জনাব আবদুল মান্নান সাহেব বললেন যে, আমার মাসে
টা: ২৭৫ (দুইশতপচাত্তর) টাকা কিস্তি পেলেই চলবে। টা: ৩০০ (তিনশত) টাকা, মানে ২৫ (পঁচিশ) টাকা বাড়ান ঠিক হবেনা। কিন্তু আমি বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র নির্মাতা তাঁকে, শ্রদ্ধেয় জনাব আবদুল মান্নান সাহেবকে বোঝালাম যে, অন্তমিলের জন্য দুইশতপঁচাত্তর কানে ভালো শোনাবেনা। ছন্দে বেখাপ্পা লাগবে।
তখন, শ্রদ্ধেয় আবদুল মান্নান সাহেব শেষে রাজী হলেন ও তৎকালীন বিখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা জনাব সাইফুদ্দিন আহমেদকে দিয়ে দর্শক জননন্দিত এক বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র নির্মাণ করলাম।
“সবাই এবার মেলাওহাত
তিনশ টাকায় কিস্তিমাৎ”
এই সময় ১৯৮৮ সালে,আমি নির্মাণ করলাম আর একটি সৃজনশীল বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র“ ইকোনো-বলপয়েন্ট পেন”।
এই কলমের লেখার বা কালির ধারণ ক্ষমতা অর্থাৎ এক কলমে কতটুকু লেখা যায়- এই থীমের উপর নির্মিত হবে বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র।
সম্পূর্ণ এ্যানিমেটেড বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র, গুটি কয়েক ইকোনোকলম দৌড়ে দৌড়ে এক মাইল পার হয়ে গেল। দর্শকদের বলা হল যে যদি আপনি-ইকোনোবল পয়েন্ট পেনদিয়ে সোজা দাগ দেন- তাহলেতা- এক মাইল অর্থাৎ ১৭৬০ গজ পর্যন্ত নিশ্চিতে লিখতে পারবেন কালি ফুরাবেনা। পে অফ্লাইনে অন্তমিলে আমি লিখলাম,
“ইকোনোলিখেচমৎকার
এক কলমেমাইল পার…”
ইকোনোকলমেরসত্বাধিকারীজনাবসালিমুলহককামাল, বললেন, না- ¯েøাগানটাকরুন।
“ইকোনোলিখেচমৎকার- এক ইকোনোয়মাইলপার”।আমিজনাবসালিমুলহককামালকে বোঝাতেসক্ষমহলাম যে, “ইকোনোলিখেচমৎকার – তারপর এক কলমে মাইল পার…… দেখুন প্রথমে রয়েছে চমৎকার /তারপর কলমে মাইল পার, এখানে অন্তমিলের জন্য আর “ম” এর অনুপ্রাশের জন্য “এক ইকোনোয় মাইল পার”ভালো লাগবেনা।
শেষে উনি রাজী হলেন আর নির্মিত হল কালজয়ী এক বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র।
সারা বাংলাদেশে তখন টিভি – টক্ শোতে, পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে প্রচুর লেখাহল।
সাপ্তাহিক“কথামালা” এর ১৯৯২ সালের একটি সংখ্যার ২৬ পৃষ্ঠায় ইকোনো বলপয়েন্ট বিজ্ঞাপনচলচ্চিত্রটি সম্পর্কে বলতে যেয়ে লিখেন:
বিজ্ঞাপনের মহিমা আজ স্বীকৃত ব্যপার। নতুন একটি পন্য বাজারজাত করার আগে বিজ্ঞ উৎপাদনকারীরা বিজ্ঞাপনচিত্রের জন্য একটি ভালো বাজেট রাখেন। এছাড়া চালুপন্য বাজারজাত করতে হলে সময়ে সময়ে নতুন বিজ্ঞাপন করতে হয়।
যেমন- জিকিউ বলপেনের নতুন একটি বিজ্ঞাপন বিটিভিতে প্রচারের পর পরই শেয়ার বাজারে দাম হঠাৎ বেড়ে যায়।
যে শেয়ারে রমূল্য ছিল ৭০ টাকা করে, তা হয়ে গেল ১১০ টাকা।
উল্লেখ্য, জিকিউ এর একটি শেয়ারের প্রারম্ভিক মূল্য ১০ টাকা করে ছাড়া হয়েছিল প্রাইমারী মার্কেটে।
এই ছিলো মোটামুটি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে অন্তমিলের গোড়ারকথা।
তবে শুরুটা ওই ,
“মাছেররাজাইলিশ /বাতিররাজাফিলিপস”।