রোববার (১০ অক্টোবর) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত রাজিবপুরের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেফাত উল্যাহ এই আদেশ দেন। সেইসঙ্গে বিজ্ঞ বিচারক শুনানি শেষে মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করার আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করছেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) প্রদীপ রায়।
জেল-হাজতে যাওয়া রাজিবপুরের সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙা গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। অপর আসামি জহুরা খাতুন রাজিবপুর উপজেলার বদরপুর গ্রামের মজিবর রহমান খাজার স্ত্রী।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাজিবপুর উপজেলার বটতলা গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের পুত্র আব্দুল করিম (৪৭) বাদী হয়ে প্রথমে আদালতে মামলাটি দাখিল করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১৫ মার্চ রাজিবপুর থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় সবাই একত্রিত হয়ে বেআইনি জনতা জমিতে অনধিকার প্রবেশ ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে মূল্যবান দলিল জালিয়াতি করার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হওয়ায় বর্তমানে আসামি সংখ্যা ৭ জন।
আসামিরা হলেন-সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম (৫৭), গোল্ডেন লাইফ একাডেমি নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইসমাইল হোসেন (৩২), ‘ভুয়া জমিদাতা’ ও ইসমাইল হোসেনের মা জহুরা খাতুন (৬০), দলিল লেখক নুরন্নবী সরকার (৩৬), আব্দুস সামাদ (৪০), কবির হোসেন (২১) ও সফিকুল ইসলাম (৩৬)।
পরে মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা তদন্ত শেষে উপরোল্লেখিত ৭ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আরও পড়ুন: সাবেক যুগ্ম-সচিবের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা
মামলা সূত্রে আরও জানা গেছে, বাদী আব্দুল করিমের দাদি এবং উপজেলার সদর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের নহর শেখের স্ত্রী দৌলতন নেছা ৩৫ বছর আগে মারা যান। এরপর তার নামে থাকা ৫৪ শতাংশ জমি তার ওয়ারিশরা ভোগদখল করে আসছিলেন। এ রকম অবস্থায় গোল্ডেন লাইফ একাডেমি নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইসমাইল হোসেন তার মা জহুরা খাতুনকে দৌলতন নেছা সাজিয়ে দলিল লেখক নুরুন্নবী সরকারসহ কয়েকজনের সহযোগিতায় গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি উক্ত ৫৪ শতাংশ জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ গোল্ডেন লাইফ একাডেমির নামে দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি করে নেন। সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম সঠিকভাবে যাচাই না করেই জহুরা খাতুনকে দৌলতন নেছা হিসেবে জীবিত দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করেন।
এই ভুয়া দলিল রেজিস্ট্রির ৩ দিনের মাথায় ৭ ফেব্রুয়ারি গোল্ডেন লাইফ একাডেমির পরিচালক ইসমাঈল হোসেন জমিটি দখল নিতে গেলে বাদী আব্দুল করিম তাতে বাধা দেন। তখন ইসমাঈল হোসেন জাল দলিলটি দেখিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করেন।
এই পরিস্থিতিতে আব্দুল করিম আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে রাজিবপুর থানা পুলিশকে মামলা রেকর্ড এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে সিআইডিকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ৭ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এ প্রসঙ্গে আদালতের জিআরও প্রদীপ রায় আরও জানান, আসামিরা অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। এদের মধ্যে একজন জেলহাজতে আছেন। অবশিষ্ট ৬ জন আসামি আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে সাব- রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম এবং ভুয়া জমিদাতা জহুরা খাতুনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্যরা জামিনে রয়েছেন।