প্রেস ওয়াচ ডেস্ক /
স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাঁর ডিজিটাল বাংলাদেশ এ সরকারের অন্যতম অর্জন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশের এসব উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। উন্নয়ন ও সততায় আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রীর অনন্য উচ্চতায় আসীন এক বিরল নেতৃত্ব তিনি।
একটি পরিবারের প্রধান কর্তা মারা গেলে পরিবারটি হতাশ হয়ে পড়ে। ঠিক তেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। দেশের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা। নানা ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয় আওয়ামী লীগকে। তবে দেশের বাইরে থেকে এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজস্ব মেধা ও যোগ্য নেতৃত্বে দলের অনেক সমস্যার সমাধান করেন। পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশ ঘটিয়েছেন অকল্পনীয়ভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিজের দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এই উন্নয়নে তাঁর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে বর্তমানে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ এবং চারবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি তিনবার বিরোধী দলের নেতাও নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। তাঁর কন্যা বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগকে আধুনিকভাবে পুনর্গঠনে ভূমিকা পালন করছেন।
২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয়। ওই দিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়। এখনও পলাতক আসামিদের দেশে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত এবং নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করতে পারলে দেশ তথা জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্গমুক্ত হবে। তবু এই অমোচনীয় কলঙ্ক বাঙালি জাতিকে বহন করতে হবে আজীবন। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ৬ জন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কারণে পুনরায় সরকার গঠন করতে পারে না আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের অঙ্গীকার দেন। এতে স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষের ও দেশের সাধারণ মানুষ এই ইশতেহার ওপর ভরসা করে আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুলভাবে বিজয় লাভ করে। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর তৎকালীন অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা খুব সহজ কাজ ছিল না। বিচারের জন্য আলামত, সাক্ষ্য ও সাক্ষী সংগ্রহ অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, দেশান্তর ও ধর্মান্তরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মোট ছয় জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এখন পর্যন্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘদিন পর এমন বিচারের রায় কার্যকর করা খুব দুরূহ কাজ ছিল। তবে এই দুরূহ কাজকে সহজ করেছে জনগণের প্রত্যাশা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা। দেশের সাধারণ মানুষ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চেয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধীরা এ দেশের গাড়ি পতাকা উড়িয়েছে, রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে। যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষরা সহ্য করতে পারেনি। মানবতাবিরোধীদের ফাঁসি কার্যকর করা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর একটি উল্লেখযোগ্য মহৎ কাজ।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ পরিবারের বড় সন্তান। তিনি ছাত্রজীবনে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরু দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে এমনটা হয়তো কখনোই ভাবেননি তিনি। প্রকৃতির নির্মম বাস্তবতা ও দলের কারণে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা বিশ্বের নেতাদের কাছে বিশেষ বার্তা দিয়ে থাকে সব সময়। তাঁর নেতৃত্বের কারণে বিশ্বনেতারা ভূয়সী প্রশংসা করেন সর্ব সময়ে। করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের জন্য গভীর অনুপ্রেরণাদায়ী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ ফরচুন ম্যাগাজিনের জরিপে শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দশম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বর্তমান বিশ্বের ১৮ জন নারী নেতৃত্বকে নিয়ে ‘উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ বইয়ের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার ছবি স্থান পাওয়ায় দেশের মর্যাদা অনন্য উচ্চতায় উঠেছে। এখানে লেখক রিচার্ড ও ব্রিয়েন শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে ৩ পৃষ্ঠার নিবন্ধন লেখেন।
যখন প্যারাডাইস ও পানামা পেপারস নিয়ে উৎকণ্ঠিত বিশ্বনেতারা, পৃথিবীব্যাপী রাজনীতিবিদরা নানাভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন বর্তমানে, তখন ব্যতিক্রম কয়েকজন বিশ্বরাজনীতিক। পিপলস অ্যান্ড পলিটিকস বিশ্বের ৫ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছে, যাদের দুর্নীতি সামান্য পরিমাণও স্পর্শ করতে পারেনি। বিশ্বের ৫ জন সৎ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় অবস্থানে আছেন। এটা দেশের জন্য নিঃসন্দেহ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্ব আসনে। এছাড়া মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, ভারতের মহাত্ম গান্ধীর নেতৃত্বকে ছাড়িয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা। বাংলাদেশকে তিনি চীন, সিঙ্গাপুর ও মিসরের উন্নয়ন আদলে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এখন তাঁর উন্নয়ন চিন্তা ও নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে আলো ছড়াচ্ছে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা এখন জননেত্রী থেকে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত।
বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যার দৃঢ় নেতৃত্বে আজ দেশ ডিজিটালি সোনার বাংলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়াতে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে দেশের সবার জীবনযাপন পদ্ধতি। সবার কাছে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারে ডিভাইস চলে এসেছে। তাই দেশের মানুষ এখন আর শুধু দেশীয় কমিউনিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তারা এখন গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যে বসবাস করছে। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ আধুনিক স্বনির্ভর ডিজিটাল সোনার বাংলা। বাঙালিরা ভাগ্যবান, ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল এই মহান নেতার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। জন্ম শুভলগ্নে একমাত্র প্রত্যাশা, তিনি যেন দেশকে আরও সেবা দিয়ে উন্নত থেকে উন্নততর করে যেতে পারেন। মহান করুণাময় তাঁকে দীর্ঘায়ু করুন।
লেখক: অধ্যাপক; তথ্য-প্রযুক্তিবিদ; সদস্য,বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি); পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)।