করোনা ভীতি কেটে গেছে জয়পুরহাটে।।মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে কমেছে প্রশাসনিক তৎপরতা

করোনা নিয়ে ভীতি কেটে গেছে জয়পুরহাটে। সবকিছু চলছে সেই আগের মতো। হাটে-বাজারে, গ্রামে-গঞ্জে মানুষের মুখে মাস্ক এখন আর চোখে পড়ে না। করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে কমেছে প্রশাসনিক তৎপরতাও। এছাড়া হাসপাতালগুলোয়ও করোনা রোগীর নেই কোনও চাপ। ফলে হাসপাতালের বেডগুলো প্রায় শূন্য পড়ে আছে। সবকিছু মিলে জয়পুরহাটে মানুষের জীবন-যাত্রা চলছে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি,শীতে করোনার বিস্তার ঠেকাতে তারা সতর্ক আছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলা আধুনিক হাসপাতাল ও গোপীনাথপুর আইএসটি আইসোলেশন ওয়ার্ড।

করোনার চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা জানতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সব বেডগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনা খাতুন জানান, এখন আর হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ নেই। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন। আর একজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছে।

.

হাসপাতালে রোগীদের ভিড়

করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে সুরক্ষা সামগ্রী অথবা অন্যকোনও সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী তাদের দেওয়া হয়েছে। করোনা চিকিৎসার শুরুতে কিছুটা সংকট থাকলেও পরবর্তীতে সেটি কেটে গেছে। করোনা চিকিৎসা সেবায় হাসপাতাল থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সাপোর্ট তারা পেয়েছেন।
সরেজমিনে জেলা আধুনিক হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ঘুরে, রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে তারা চিকিৎসা নিতে এসে নানা হয়রানিতে পড়লেও এখন সে অবস্থা কেটে গেছে। চিকিৎসকদের সরাসরি সেবা তারা এখন পাচ্ছেন।
পায়ে আঘাতের ব্যথার জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহরের সবুজনগর এলাকার সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালে আগের মতই রোগীদের প্রচণ্ড ভিড়। লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অথচ দুই মাস আগেও এই হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যায়নি। করোনার ভয়ে চিকিৎসকরা চেম্বারে থাকলেও রোগীদের সঙ্গে দেখা করতেন না। এখন চিকিৎসকরা সরাসরি রোগী দেখছেন।’

হাসপাতালে রোগীদের ভিড়
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক বলেন, ‘আড়াই’শ শয্যার এ হাসপাতালে ১০০  শয্যার জনবল কাঠামো নিয়ে এখন প্রতিদিন আমাদের হাজারের ও বেশি রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। প্রচণ্ড ভিড় রোগীর। নানা সংকটের মধ্যে থেকেও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে জয়পুরহাটকে মুক্ত রাখার জন্য প্রত্যন্ত মফস্বল এলাকা জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুরে আমরা আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছি। যেখানে জেলার শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়েছে। এখন আর কোনও রোগী সেখানে নেই। সুরক্ষা সামগ্রীসহ সবকিছুর সাপোর্ট পাওয়ায় আমাদের এখানে কারও কোনও অভিযোগ নেই।

.

ফাঁকা পড়ে আছে করোনা ইউনিট

তিনি বলেন, ‘আক্রান্তের হার কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ভীতি কেটে গেছে। এজন্য তারা সামাজিক দুরত্ব তো মানছেনই না। উপরন্তু মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না। আমরা এ নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সভা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শীত শুরু হওয়ার আগেই সচেতনতার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের।’
জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি জেলার সব মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করার। এজন্য জেলার বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, শ্রমিক সংগঠন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা সবার সহযোগিতা নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে ‘নো মাস্ক, নো ওয়ার্ক’ এর বিষয়টি। সামাজিক দূরত্ব মানতে মানুষকে সচেতন করার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালততো থাকবেই। আশা করছি মানুষ সচেতন হবে এবং আমাদের এ সমস্যা কেটে যাবে।’

Share: