(বাসস) : গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, রাজধানীর সবধরণের ভবন পরিদর্শন করে বিল্ডিং কোডের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, বিল্ডিং কোডের অধীনে সকল শর্ত পালন না করলে বিল্ডিং ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
আজ রাজউক মিলনায়তনে ‘বনানীর কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউতে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা এবং ঢাকা শহরের বিদ্যমান ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক সভা’ পরবর্তী এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গৃহায়ন মন্ত্রী বনানীর এফ আর টাওয়ারে হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা রাজউকের ২৪টি টিম করেছি। প্রথমে বহুতল ভবন, দ্বিতীয় দফায় সব ভবন পরিদর্শন করে সবাইকে বিল্ডিং কোডের আওতায় আনার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, আমরা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অনুমোদনহীন বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হবে। অনুমোদনের বাইরে অবকাঠামো থাকার কোনো সুযোগ নেই’।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বনানীতে অনাকাঙ্খিত অগ্নিকান্ডের ঘটনা সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ ঘটনা মনিটরিং করেছেন। তাঁর নির্দেশনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সকলে মিলে আমরা একসাথে কাজ করেছি’।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় এবং রাজউক স্বল্প সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনে বিল্ডিং এর অনুমোদন থেকে শুরু করে বিল্ডিং উর্দ্ধমুখী হলো কিসের ভিত্তিতে, সে সময় কারা দায়িত্বে ছিলেন, যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কিনা, সিঁড়ি পযাপ্ত প্রশস্ত ছিল কিনা, একটা দুর্ঘটনা হলে দ্রুতগতিতে মানুষ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা ছিলো কিনা-এ সব বিষয় তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। যে সময় উর্দ্ধুমুখী অতিরিক্ত ভবন নির্মিত হয়েছিলো, সে সময় সেখানে ইন্সপেক্টর বা অথরাইজড অফিসার কারা ছিলেন অথবা অন্যান্য কারা কিভাবে সম্পৃক্ত সকলকে তদন্ত কমিটি দৃশ্যপটে নিয়ে আসবে। স্বাধীন তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরো বলেন, আমার রাজউককে ঢেলে সাজাবার জন্য, রাজউক-এর কর্ম পরিসরকে আরো গতিশীল করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এখন থেকে প্রতিটি এলাকায় প্রতিদিনের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নির্ধারিত ফর্মে নোট করতে হবে। রাজউক এর প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় সকল রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে, কোন এলাকায় কতটা বিল্ডিং পরিকল্পনা পরিপন্থী হয়েছে অথবা পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়নি। তার ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই বহুতল ভবনের রিপোর্ট আমরা পেয়ে যাবো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তদন্ত রিপোর্টকে আলোর মুখ দেখাবো। জাতীয় পত্রিকায় এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমরা বিজ্ঞাপন আকারে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবো। দেশের মানুষের জানা দরকার কারা অর্থলোভী, কারা আইন লঙ্ঘন করেন তাদের স্বরূপ দেশবাসীর জানা দরকার। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা অবশ্যই গ্রহণ করবো’।
মন্ত্রী বলেন, আমরা নগরবাসীর সহযোগিতা চাই, সকল ভবন মালিকের সহযোগিতা চাই, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাই। সকলে সহযোগিতা না করলে সমন্বিতভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। আর সমন্বিতভাবে কাজ না করলে এ জাতীয় দুযোগ বারবার হানা দেবে।
যারা বিল্ডিং ব্যবহার করেন তাদেরকে অনুরোধ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যে বিল্ডিং এ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নাই, সিঁড়ির ব্যবস্থা নাই, দ্রুত নেমে আসার ব্যবস্থা নাই, অনুমোদনহীন একটি ফ্ল্যাট, সেটা আপনারা ব্যবহার করবেন না। আমরা চাই মানবিক দায়িত্ববোধে সকলে এগিয়ে আসুন’।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বিল্ডিং এ পযাপ্ত না থাকলে অকুপেন্সী সনদ দেয়া হবে না। আমরা আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিল্ডিং ব্যবহারের পূর্বে হোল্ডিং নম্বর থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, রাজউক-এর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।